ডাক্তার হয়ে চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হতে চায় ইসরাত জাহান

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান আঁখি।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে নারী বা কিশোরীরা মেয়েলি সমস্যায় ভুগলেও সহজে করো সঙ্গে তা প্রকাশ করতে চান না। তা ছাড়া কাছাকাছি সরকারি কোন চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকায় বা নারী চিকিৎসক না থাকায় সমস্যা নিয়ে ঘরে বসে থাকেন। ফলে সমস্যা গুরুতর হয়ে যাওয়ার পর তা প্রকাশ পায়। এ সময় চিকিৎসা নিলেও নানা ভোগান্তির মুখে পড়েন তাঁরা। এসব প্রত্যন্ত এলাকার নারী ও শিশুদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পড়ালেখা করে চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হতে চায় বাবুডাইং আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান আঁখি। স্বপ্নপূরণে সফল হবেই বলে আশাবাদী ইসরাত।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্র এলাকার বাবুডাইং গ্রামে অবস্থিত প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা। এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেই সে এ স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা, ভালোবাসা, অনুপ্রেরণায় নিজের পড়ালেখা এগিয়ে নিচ্ছে ইসরাত।

ইসরাতের বাবা সাইদুর রহমান পাশের গ্রামের মোড়ে ছোট্ট একটি দোকান নিয়ে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করেন। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় এক যুগ আগে বাবুডাইং বনের পাশে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরাসহ কয়েক পরিবার। এখান থেকেই তিনি তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। কষ্ট করে হলেও তিনি সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বড় ছেলে রাফিউল ইসলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় বাংলা ক্যাপ প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করছেন। অন্য ছেলে আব্দুল কুদ্দুসও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আব্দুল কুদ্দুসও বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আর মেয়ে ইসরাত জাহানকে পড়ালেখা করিয়ে একজন চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। নিজেদের আনন্দ-সুখ ত্যাগ করে কষ্টগুলোকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তিন ভাই-বোনকে শিক্ষিত করতে বাবা-মায়ের প্রচেষ্টা ছিল অসীম। তাঁরা অনেকটা সফলও হয়েছেন। আমাদের পাশে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও ভালোবাসার নিদর্শন রেখেছেন বাবুডাইং আলোর পাঠশালা। এ বিদ্যালয়ে আমার ছোট দুই ভাই-বোন বিনা খরচে লেখাপড়া করতে পেরেছে। শিক্ষকবৃন্দও খুব আন্তরিক। যত্ন নিয়ে পড়াশোনা করিয়ে থাকেন। কেউ একদিন স্কুলে যেতে না পারলে খোঁজ নেন। শিক্ষকদের আন্তরিকতা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। তাঁদের দেখেই আমরা স্বপ্ন দেখার সাহস পাই।’