সেবিকা হতে চায় ববিতা সাইচুরী
গোদাগাড়ী থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম বাবুডাইং। গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম ববিতা সাইচুরীর। ছোটবেলা থেকেই সে অর্ধাহারে-অনাহারে বাবা-মায়ের সঙ্গে কৃষিকাজে সহযোগিতা করে আসছে। বাবা অভিনাথ সাইচুরী ও মা আনদী মুরমুর দ্বিতীয় সন্তান সে।
শিক্ষার হাতেখড়ি বাবুডাইং আলোর পাঠশালা থেকেই তার। বর্তমানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে। রোল নম্বর তার এক। একই বিদ্যালয়ে তার বড় বোন সংগীতা সাইচুরী নবম শ্রেণিতে ও ছোট ভাই আকাশজন সাইচুরী পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
বাড়ির কাজের পাশাপাশি সে ধান রোপণ, নিড়ানি ও ধান কাটার কাজ করে। সেই কাজ থেকে পাওয়া মজুরির টাকা দিয়ে নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি পরিবারের কাজেও ব্যয় করে থাকে।
ববিতা সাইচুরী একজন কর্মঠ মেয়ে। ক্লাসের প্রতি সে খুবই মনোযোগী। সহপাঠীদের প্রতিও খুবই আন্তরিক। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। কোল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা সাংস্কৃতিক দলের সদস্যও সে।
ববিতা সাইচুরী বলে,‘আমি লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছি বাবুডাইং আলোর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে। আমাদের গ্রাম থেকে নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এত দূরে গিয়ে আমার পক্ষে লেখাপড়া করা সম্ভব হতো না, যদি না আমাদের এই গ্রামে বাবুডাইং আলোর পাঠশালা থাকত। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ খুবই আন্তরিক। তাঁরা লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, আমাদের গ্রামের মানুষ চিকিৎসা সেবা ঠিকমত পায় না। কারণ নিকটবর্তী হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। তাই আমার স্বপ্ন আমি বড় হয়ে একজন সেবিকা হব। আমার গ্রামের এই অসহায় মানুষের সেবা করব।’
ববিতার মতো এই রকম শত শত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের জন্য শিক্ষা দিয়ে আসছে বাবুডাইং আলোর পাঠশালা। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় সারা বাংলাদেশে এই রকম ছয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে প্রথম আলো ট্রাষ্ট।