সেবিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে সান্তনা টুডু

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সান্তনা টুডু।

সেবিকার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সান্তনা টুডু। কারণ তাদের এলাকার মানুষজন এখনো সঠিক চিকিৎসা বিষয়ে অসচেতন। এখনো অসুস্থ হলে তাঁরা গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছেই চিকিৎসা নেয়। গুরুতর অবস্থা হলেও যেতে চায় না সরকারি হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। তাই বড় হয়ে একজন সেবিকা হয়ে গ্রামের এসব পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সচেতন করা ও চিকিৎসা সেবা দিতে চায়।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম বাবুডাইংয়ে তার জন্ম। বাবা শিবলাল টুডু ও মা শ্যামলী হাসদার সংসারে চার সন্তানের মধ্যে সান্তনা টুডু দ্বিতীয়। বড় বোন নন্দিনী টুডু অষ্টম শ্রেণি ও ছোট ভাই শ্যাম সুন্দর টুডু দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তারা সকলেই বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী। সবচেয়ে ছোট বোনের বয়স দুই বছর।

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সান্তনা টুডু। সবুজে ঘেরা স্কুল প্রাঙ্গণে সান্তনা টুডু।

শিবলাল টুডু পেশায় দিনমজুর। তাঁর আয়ে সংসারের খরচ জোগান দিতে টানাটানি হয়। তাই সান্তনার মা, সান্তনা ও নন্দিনী টুডুও বিভিন্ন সময় ধান লাগানোর কাজ করে সংসারে অর্থের জোগান দেয়।

সান্তনা টুডু বলে, ‘এমনও দিন গেছে বাবা আমাদের তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে দিতে পারেনি। আমাদের ঠিকমতো খেতে না দিতে পারার কষ্ট বাবার চেহারায় ভেসে উঠত। তাই নার্সিং পড়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াব।’

সান্তনা টুডু নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। অভাবের সংসারে তুমি কীভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘আমি মাঝে মাঝে ধান রোপণের কাজ করে থাকি। তা ছাড়া আমি যদি ভালোভাবে পড়ালেখা করি এবং প্রতিটি সরকারি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারি। তাহলে আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট মেধাবী শিক্ষা বৃত্তি অর্জন করতে পারব। তখন আমার আর্থিক অভাবে আমার পড়াশোনা বন্ধ হবে না এবং আমি আমার সেবিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা করতে কোন বেতন দিতে হয় না। আমি দুই বার স্কুল ড্রেস পেয়েছি। তাড়াও বিভিন্ন সংকটে আমরা ত্রাণ পেয়েছি। আমি দেখাতে চাই গরিব হলেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষকগণ অনেক আন্তরিক। তাঁরা যেকোনো শিক্ষার্থীর সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেন।’

সান্তনার মা শ্যামলী হাসদাকে তার মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মেজো মেয়ে পড়ালেখায় ভালো। কারণ প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে। সে নিয়মিত স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু আমিই মাঝে মাঝে তাকে স্কুলে যেতে দিই না। কারণ আমিও অন্যের জমিতে কৃষি কাজ পেলে কাজ করতে যাই। তখন আমার ছোট মেয়েকে দেখাশোনার জন্য সান্তনাকে বাড়িতে রেখে যাই। যেহেতু আমার মেয়ে পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহী। তাই তার পড়াশোনা যেন ব্যাঘাত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখব এবং নিয়মিত স্কুলে পাঠাব। আমার বিশ্বাস, একদিন তার স্বপ্ন পূরণ হবে। আমার ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিচালনাকারীদের অনেক ধন্যবাদ।’