‘আলোর পাঠশালা না থাকলে আমার এসএসসি পাস করা হতো না’
দুই ছেলে মৃদুল ও মোরসালিনকে নিয়ে মুক্তা রেনু বিবির ছিল সুখের সংসার। সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে বড় মানুষ করবেন, এই ছিল তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু স্বামী রবিউল আলম দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতায় দুই ছেলে ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন তিনি।
সেই দিনের কথা স্মরণ করে মুক্তা রেনু বিবি বলেন, ‘স্বামী যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে, তখন বড় ছেলে মোরসালিন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত, ছোট ছেলে মৃদুলের বয়স তখন এক বছর। পৃথক সংসার শুরু করার পর স্বামী আর আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। অনেক কষ্ট করে বড় ছেলে ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে। আর্থিক অনটন থাকায় মোরসালিনের আর পড়ালেখা হয়নি। সে এখন বেকার। মৃদুলকে ভর্তি করানো হয় প্রথম আলো ট্রাস্টের স্কুলে। স্কুলে পড়ালেখার খরচ দেওয়া লাগেনি। মৃদুল এবার গুড়িহারী আলোর পাঠশালা থেকে এসএসসি পাস করেছে। কলেজে পড়তে খরচ লাগবে। আমার তো সঙ্গতি নেই। মৃদুলের পড়ালেখাও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম গুড়িহারী শালবাড়ি। গুড়িহারী শালবাড়ি গ্রামে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্পদায় মিলে প্রায় ৫০০ পরিবারের প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। ২০১৫ সালে কয়েকজন সচেতন ব্যক্তির উদ্যোগে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট।
গুড়িহারী কামদেবপুর আলোর পাঠশালা নামে পরিচিত সেই স্কুল থেকে সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মৃদুল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গুড়িহারী কামদেবপুর আলোর পাঠশালা না থাকলে আমার এসএসসি পাস করা হতো না। বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছি। স্কুলে কোনো পয়সা দিতে হয়নি। প্রাইভেটও পড়তে হয়নি। শিক্ষকেরা যত্ন করে পড়িয়েছেন। বাড়িতে পড়ালেখার খোঁজ নিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
মৃদুল সম্প্রতি ভর্তি হয়েছেন নিয়ামতপুর সরকারি কলেজে। মৃদুলের প্রিয় বিষয় রসায়ন। সে স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রসায়ন বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করবে। পরিবারের দায়িত্ব নেবে। কিন্তু এ জন্য তাকে পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মৃদুলের পড়শোনা যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মৃদুলের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে?