হাতে বুনো ফুল নিয়ে উঁচু-নিচু জমির আলপথ বেয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে এসে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কোল ও বাংলা ভাষায় একুশের গান গেয়ে প্রভাতফেরি শেষে নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। কোল ভাষায় গান গেয়ে মাদলের তালে নাচে তারা। মাতৃভাষার সংগ্রাম, আত্মবলিদান ও তাৎপর্য নিয়ে হয় আলোচনা সভা। রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বাড়ি বাড়ি থেকে তোলা চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হয়। এভাবে গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাবুডাইং গ্রামের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরি বের করে। এ সময় ‘ইংবেন বয়হাওয়া রাগোয়া ইকুশ না: ফেব্রুয়ারি, ইংকি আত হিরিং ইং...’, অর্থাৎ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’ কোল ও বাংলা ভাষায় একুশের গানটি সবাই গেয়ে হাঁটতে থাকে। প্রভাতফেরির পর নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় শহীদ মিনারে ফুল দেন আয়ারল্যান্ডের পর্যটক রোজ কেইন। তিনি খেজুর ও বুনো ফুল অর্পণ করেন ভাষাশহীদদের স্মরণে।
এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, দিবসটি উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, মাধব কোল সরেন, কোল নারীনেত্রী কল্পনা মুর্মু, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা মতিউর রহমান, রফিক হাসান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর।
এ আয়োজনে যুক্ত ছিল কোল ভাষা নিয়ে কাজ করা সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিক (এসআইএল) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
উল্লেখ্য, সামিট গ্রুপের সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বাবুডাইং আলোর পাঠশালাসহ দেশজুড়ে ছয়টি স্কুল পরিচালনা করছে।