বাবা সবজি চাষী। সবজির খেতে বাবার সঙ্গে হাত লাগাতে হয় তাকেও। কিন্তু পড়াশোনায় তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বাড়িতে অভাব-অনটনের মাঝেই টেকনাফের দমদমিয়া আলোর পাঠশালার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম নিয়মিত ক্লাসে ভালো ফল করছে। শুধু পড়াশোনা নয়, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমেও সাইফুলের দক্ষতা সবার নজর কেড়েছে। সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ের কুইজ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে সে।
সাইফুলেরা দুই ভাই- দুই বোন। বাবা– হামিদ হোসেন একসময় নাফ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নাফ নদীতে সাত বছর ধরে মাছ ধরা বন্ধ। উপায়হীন হামিদ হোসেন বর্তমানে জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করে সংসার চালান। সবজির বীজতলা প্রস্তুত, চারা রোয়া থেকে, সবজি খেত থেকে তোলা সব কাজেই বাবাকে সাহায্য করতে হয় সাইফুলকে। তার মাঝেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
সাইফুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরে সূর্যে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার দিন শুরু হয়। প্রথমে জমি থেকে বিক্রয়যোগ্য সবজি তোলে সে। এরপর জমিতে পানি দেওয়া ও পরিচর্যার কাজ করে। এরপর সকালের নাস্তা সেরে সকাল সাতটার মধ্যে সেই সবজি নিয়ে দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যায় স্থানীয় জাদিমুড়া বাজারে। বাজারে সেই সবজি বিক্রয় করে বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে নয়টার মধ্যে বাড়ি ফরে। সাইফুলের স্কুল শুরু হয় সকাল দশটায়। পড়াশোনাতেও নিয়মিত ভালো করছে সে। পঞ্চম শ্রেণিতে সাইফুলের রোল নম্বর দুই।
সাইফুলকে নিয়ে তার শিক্ষকেরাও আশাবাদী। সাইফুলের বিষয়ে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত দমদমিয়া আলোর পাঠশালার সহকারী শিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী এবং তার আচরণ যথেষ্ট মার্জিত। সে জমিতে এতটা পরিশ্রম করেও নিয়মিত পড়াশোনায় ভালো করছে। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সঠিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা পেলে আমাদের সাইফুল জীবনে অনেক বড় হবে।’
উল্লেখ্য,দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোট সাতটি স্কুল পরিচালনা করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। রাজশাহীতে ২টি, কুড়িগ্রাম, ভোলা, নওগাঁ, টেকনাফ ও বান্দরবানে ১টি করে মোট সাতটি স্কুলে ১ হাজার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে পড়াশোনা করছে।