মারমা ভাষায় জনপদটির নাম লিরাগাঁও। বাংলা ভাষায় কচ্ছপতলী। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে দূর্গম স্থানে জনপদটির অবস্থান। মারমা, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গ্যা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় ৩৬টি পাড়া নিয়ে কচ্ছপতলী জনপদটি গড়ে উঠেছে। প্রতিটি পাড়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার বাস করে। সাধারণ মানুষের শিক্ষার সুযোগ বিস্তারে কচ্ছপতলী এলাকা ঘিরে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এলাকাজুড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে ১৯৯২ সালে কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করলেও অর্থাভাবে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলেও ২০২০ সালে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আবারো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোনো অসংখ্য শিক্ষার্থী শিক্ষার মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়ে। প্রথম আলোর বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালুর বিষয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথম আলো ট্রাস্ট তাদের অনুসৃত নীতি অনুযায়ী কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে সামিট গ্রুপ ও আঞ্জুমান–আজিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতায় কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট।
বর্তমানে বিদ্যালয়টি কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক আলোর পাঠশালা নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি পাঠশালাটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন ও কচ্ছপতলী বৌদ্ধ বিহারের পাশ ঘেঁষে বিদ্যালয়টির অবস্থান। দুটি পৃথক পাকা ভবনে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৫০ জন শিক্ষার্থী পাঠশালাটিতে অধ্যায়ন করছে। পাঠশালাটির প্রতিষ্ঠাতা আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাইনি মারমা বলেন, ‘কচ্ছপতলী একটি দূর্গম জনপদ। এখান থেকে পহাড়ি উঁচু–নিচু পাকদণ্ডী পেরিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলায় গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই আমরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু স্কুলটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমাদের পক্ষে বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যায় বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ তারা বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।’
প্রথম আলো ট্রাস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পাঠশালাটিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠ সহায়ক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়েছে। বিদ্যালয়ের মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইতিমধ্যে পৃথক দুটি ফুটবল টিম গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক দল। গত ১৩ জুলাই বান্দরবানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী গণিত মেলায় পাঠশালার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কচ্ছপতলী নিম্ন মাধ্যমিক আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক লাপ্রাদ ত্রিপুরা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অমিত সম্ভবনা রয়েছে। প্রথম আলো ট্রাস্ট বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, দূর্গম এই পাহাড়ি অঞ্চলে শিক্ষার আলো বিস্তারে পাঠশালাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
উল্লেখ্য, সামিট গ্রুপ ও আঞ্জুমান–আজিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সহযোগিতায় দেশব্যাপি ৭টি স্কুল প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।