গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির ছাত্র সিপন দাস। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া সিপন দাসের বাড়ি ভীমপুর গ্রামে। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে ছোট সে। নিজের জীবন গড়ার চেষ্টায় সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সে। শত কষ্ট হলেও মানুষের মতো মানুষ হতে হবে—এটাই সিপনের সংকল্প।
সিপন দাস লেখাপড়ায় বেশ ভালো। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গণিত ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, বিশ্বসাহিত্যের বইসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী সে। সিপন ২০২৩ সালে গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও স্কুল কামাই দেয়নি সে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে নিয়মিতভাবে স্কুলে আসার চেষ্টা করে সব সময়।
সিপন দাসকে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘আমি লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে আমাদের সমাজের যত কুসংস্কার আছে সেগুলো দূর করতে চাই।’
পরক্ষণেই সিপন জানায়, ‘আলোর পাঠশালা না থাকলে আমার লেখাপড়া হতো না। কারণ আমার বাবার পক্ষে আমাকে লেখাপড়া করানোর জন্য সামর্থ্য নাই। আলোর পাঠশালা থেকে স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য সাইকেল পেয়েছি। সাইকেল পেয়ে আমার খুব উপকার হয়েছে। এই স্কুলে লেখাপড়ার জন্য কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না।’
সিপন দাসের বাবা লাধু দাস দিনমজুরি করে সংসার চালান। নিজে লেখাপড়া না জানলেও তার ছোট ছেলে সিপন দাসকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করানোর প্রবল ইচ্ছা আছে তাঁর। লাধু দাস বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। অন্যের জমিতে কাজ করে যেটুকু আয় করি তা দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাই আমার ছোট ছেলে স্কুলের পাশাপাশি বিশেষ করে ছুটির দিন আমার সঙ্গে অন্য মানুষের জমিতে কাজ করে। কাজ করে যা রোজগার করে, তা দিয়ে তার লেখাপড়ার (খাতা, কলম) খরচ চালায়। আবার আমাদের গ্রামের পিছিয়ে পড়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বিকেল বেলা বিনা পয়সায় পড়ায়। আমার যতই কষ্ট হোক আমার ছেলেকে লেখাপড়া করাতে চাই।’