সেবিকা হয়ে পরিবার ও মানুষের সেবা করতে চায় নিতন্তি টুডু

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতন্তি টুডু।

সেবিকার হওয়ার স্বপ্ন দেখে বাবুডাইং আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতন্তি টুডু। তার বাবার নাম কালু টুডু এবং মা মালতি টুডু। তারা তিন বোন, তবে কোন ভাই নেই। ছেলে সন্তান না থাকায় তার বাবা মাঝে মাঝে দুঃখ প্রকাশ করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। আমার মেয়েগুলোর বিয়ে হয়ে গেলে তারা তো শশুর বাড়ি চলে যাবে। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ থাকবে না।’

এই আক্ষেপের কথাগুলো শোনে তাঁর মেজো মেয়ে নিতন্তি টুডু মনে খুব কষ্ট পেত। তাই সে পড়াশোনা করে সেবিকা হতে চায়। সেবিকা হয়ে চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায়। বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে চায়। তার বাবার যে ছেলে সন্তান নেই, সেই অভাব কখনো অনুভব করতে না হয়, মেয়ে সন্তানও বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে পারে সেটাই প্রমাণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নিতন্তি টুডু।

স্বপ্নপূরণে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করে। পড়াশোনায়ও ভালো সে। বরাবরই বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে থাকে। সে প্রতিদিনের পড়া নিয়মিত করে থাকে এবং নিয়মিত স্কুলে আসে। নিতন্তি টুডুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণে কখনো যদি কোন বাধা আসে তাহলে কি করবে? উত্তরে সে জানায়, ‘আমি জানি আমার বাবা সাধারণত মেয়েদের পড়াশোনা ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে থাকে। তাই আমার বড় বোনের বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি। কিন্তু আমি আমার বাবা-মাকে বলেছি, যদি তাঁরা আমাকে পড়াশোনা করায় এবং স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকে তাহলে তাঁদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে দেব। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তা ছাড়া বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষকগণ অনেক আন্তরিক, তাঁর যেকোনো শিক্ষার্থীর সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেন।’

নিতন্তি টুডুর বড় বোন বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তার মার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, আপনার মেয়ে নিনন্তি টুডু তো পড়াশোনায় খুব ভালো। তার পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো চিন্তা ভাবনা আছে কিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা আছে। সে যতটুকু পড়াশোনা করতে চায় আমরা তার পাশে থাকব। কারণ আমাদের বড় মেয়েও পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। কিন্তু আমরা তাকে পড়াশোনা করতে দিইনি। এটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষকগণ আমাদের অনেক বুঝিয়ে ছিল। কিন্তু আমরা তাঁদের কথা শুনিনি। এখন সেই ভুল করতে চাই না। যেহেতু আমাদের মেয়ে পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহী। তাই তার পড়াশোনা যেন ব্যাঘাত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখব। তা ছাড়া বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা করতে কোন বেতন দিতে হয় না। আমাদের মেয়ে দুই বার স্কুল ড্রেস পেয়েছে। বিভিন্ন সংকটে আমরা ত্রাণ সহায়তা পাই। যাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় বরেন্দ্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিচালনা করছেন, তাঁদের জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ’।