বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় এসএসসিতে পাস করল সবাই

এবার এসএসসি পাস করা চারজনের মধ্যে তিনজন।

পেয়ারা, বরই ও আম বাগান পরিচর্যার কাজ করে রঞ্জিত কোল টুডু। এ কর্মজীবনের মধ্য দিয়েই সে চালিয়ে যায় পড়াশোনা। এভাবে কাজ ও পড়াশোনার মধ্য দিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা পাস করল রঞ্জিত।

অন্যদিকে সিমন্ত হাসদা কাজ করে রাজমিস্ত্রির যোগালী হিসেবে। বছর দুয়েক আগে এক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব পড়ে নিজের ওপর। এখন মাকে নিয়ে তার সংসার। বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা। এমতাবস্থায় শিক্ষকেরা স্কুলে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিলেও সুযোগ করে উঠতে পারেনি সিমন্ত। মাঝেমধ্যে স্কুলে যেত। কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে এবারের এসএসসি পরীক্ষা পাস করেছে সে।

ওপরে যে দুজনের কথা বললাম, তারা প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী। রঞ্জিত ও সিমন্ত ছাড়াও আরও দুজন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা পাস করেছে। তারা হলো সায়েমা আক্তার ও মঞ্জুরী কোল টুডু। মঞ্জুরী কোল টুডুরও জীবনের গল্পটা একই রকম। পরিবারের আর্থিক সাহায্য করতে মায়ের সঙ্গে ধান রোপণের কাজ করেছে, এননও করে।

রঞ্জিত কোল টুডু বলে, 'বাগানে কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানো হয়। পাশাপাশি নিজের পড়ালেখার খরচও। শিক্ষকরা প্রায় বাড়িতে এসে স্কুলে যেতে বলেন। তাঁরা বোঝালেন, সপ্তাহে দুদিন ছুটি, এ দিনগুলোতে কাজ করে সংসারে সাহায্য করতে পারো। অন্যদিনগুলোতে স্কুলে আসো। স্যারদের কথামত কিছুদিন স্কুলে গেলাম। কিন্তু এরমধ্যে বাগান মালিক ডেকে পাঠিয়ে বললেন, সপ্তাহে দুদিন কাজ করাতে পারব না। হয় নিয়মিত কাজ করো, নাহলে ছেড়ে দাও। বাধ্য হয়ে স্কুল বাদ দিয়ে কাজে লেগে গেলাম। মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতাম। স্যারেরাও চেষ্টা করতেন, যথাসম্ভব পড়া বুঝিয়ে দিতে। মনে হয়েছিল, পড়াশোনা ছেড়ে দিই। কিন্তু স্যারদের অনুপ্রেরণা ও চেষ্টার কারণে তা ছাড়িনি। তাই আজ এসএসসি পাস করতে পেরেছি।'

সিমন্ত হাসদা জানায়,'বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে খরচ যোগাতে রাজমিস্ত্রির কাজে যুক্ত হয়েছি। ইচ্ছে আছে, কলেজে ভর্তি হব। কাজের সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখাও চালিয়ে যাব।'

সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়।