কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম দমদমিয়া, যেখানে একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে নাফ নদী। জীবিকাসঙ্কটে থাকা জেলে পরিবার অধ্যুষিত এই শিক্ষাবিমুখ জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে দমদমিয়া আলোর পাঠশালা। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি এখন এলাকার মানুষের ভরসার জায়গা।
প্রায় ৩১২টি পরিবারের এই গ্রামটিতে দীর্ঘদিন নাফ নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় অধিকাংশ পরিবারের অবস্থা নাজুক। এমন প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষার সুযোগ কম থাকায় মানুষের মধ্যে শিক্ষা সচেতনতাও ছিল যথেষ্ট কম। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আলোর পাঠশালাকে এখানকার শিক্ষাবিমুখ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে এক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী রাজেশ কুমার কানুর নেতৃত্বে সহকারী শিক্ষকবৃন্দ বার্ষিক পরীক্ষা শেষে প্রতিটি পাড়ায় গিয়ে অভিভাবকদের একত্রিত করে শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষাহীনতার কুফল তুলে ধরে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। এই প্রচেষ্টার ফলে যেসব অভিভাবক সন্তানদের পড়াশোনা করাতে আগ্রহী ছিলেন না, তারাও এখন সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন হয়ে আলোর পাঠশালায় ভর্তি করাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের অবৈতনিক কার্যক্রম, শিক্ষার পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এবং হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের নিশ্চয়তা এই ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এসে এলাকায় এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। এখন প্রতিটি পরিবারের সন্তানরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে এবং অনেক অভিভাবক নিয়মিত এসে পড়াশোনার খোঁজ নিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক শ্রী রাজেশ কুমার কানু বলেন, ' একটা সময় এখানকার মানুষ শিক্ষাবিমুখ ছিলেন। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেছি। স্থানীয় মানুষদের ভরসার জায়গা এখন প্রথম আলো ট্রাস্ট। আমরা পেরেছি এই পিছিয়ে পড়া জনপদে শিক্ষার আলো জ্বালাতে। এই আলো একদিন বিচ্ছুরিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।' প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে দমদমিয়ার প্রতিটি ঘরে আজ শিক্ষার আলো পৌঁছে গেছে।