‘আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি ঐতিহ্যের নাম হইলো তীর ছোঁড়া। কিন্তুক হামার মধ্যে এর চল আর নাই। তাই অনেকের হাতের নিশানা ছুইট্যা গেছে। আইজ তীর চালাইয়া তার প্রমান পাইনু। তবুও আনন্দ যে, বছরে অন্তত একদিন হামরা তীর ছোঁড়া খেলা করতে পারি। তাও আবার এই স্কুলের লাইগ্যা। বিজয় দিবসে স্কুলের ছেলে–মেয়েদের পাশাপাশি হামারও খেলাধুলার সুযোগ করে দেয় স্কুল।’
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাবুডাইং আলোর পাঠশালার আয়োজনে তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এমনই মন্তব্য করেন কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম প্রধান কার্তিক কোল টুডু। বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা প্রতিবছর মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল আটটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর, সহকারী শিক্ষক সোনিয়া খাতুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। এরপর সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে পৃথকভাবে বিস্কিট দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম–দ্বিতীয় শ্রেণির ছেলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চামুচ-মার্বেল দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছেলেরা মোরগ লড়াই ও মেয়েরা রশি চালনা খেলায় অংশ নেয় । অন্যদিকে পঞ্চম, ষষ্ঠ সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছেলে শিক্ষার্থীরা ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা অংশ নেয়। নবম, দশম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা মোমবাতি দৌড় ও সুই-সুতা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় । ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উন্মুক্ত ইভেন্টের মধ্যে ছিল ঐতিহ্যবাহী তীর নিক্ষেপ , যেমন খুশি তেমন সাজো, হাঁড়িভাঙ্গা ও দড়ি টানা খেলার আয়োজন।
প্রতিযোগিতা শেষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সহ–সভাপতি কার্তিক কোল টুডুর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন দিলু, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজারুদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শামসুল হক গানু, কবির হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরিকুল আলম, সমাজসেবী আমিনুল ইসলাম প্রমূখ।