ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র পরশ আহমেদের দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। কিন্তু এই ঘুম ভাঙা কোনো খেলার জন্য নয়, বরং মাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানোর জন্য। রাজশাহী আলোর পাঠশালার এই ছোট্ট শিক্ষার্থী মাত্র ১২ বছর বয়সেই বইছে এক পাহাড় সমান দায়িত্ব। একদিকে অসুস্থ মায়ের দেখভাল, অন্যদিকে বড় বোনের জীবনসংগ্রাম তাকে ভাবিয়ে তুলেছে এই অল্প বয়সেই। পরশের মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং নিয়মিত ওষুধ প্রয়োজন। কিন্তু বাবা অন্য একটি সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখানে কোনো খরচ দেন না, বরং বাড়িতে এলে পরশকে পড়াশোনার জন্য বকাবকি করেন। বাবার এই অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণের শিকার পরশের বড় বোনও। ছোট বয়সেই তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা পরশের একেবারেই অপছন্দ।
শুধু পরিবারের দায়িত্বই নয়, পরশ নিজেও চোখের সমস্যায় ভুগছে। ডাক্তার নিয়মিত চশমা পরার পরামর্শ দিলেও বাবার অবহেলার কারণে সেই চশমা কেনার সামর্থ্যও হয়নি তার। এতকিছুর মধ্যেও সে নিয়মিত স্কুলে আসে এবং শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। পরশের স্বপ্ন সে বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হবে। তার এই স্বপ্নের মূলে রয়েছে একটি প্রত্যয়—যারা তার মায়ের জীবনকে কষ্টময় করে তুলেছে, তাদের জবাব দেওয়া। সে চায় না তার মা বা বোনের মতো আর কোনো নারী কষ্ট পাক। এইটুকু বয়সেই তার ইতিবাচক চিন্তা শিক্ষক-সহপাঠী সবাইকে মুগ্ধ করেছে। শিক্ষকদের বিশ্বাস, শত ঝড়েও যে শিশু এমন মানবিক চিন্তা লালন করে, তার স্বপ্ন পূরণ হওয়া উচিত। প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ তারা পরশের মতো শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছে।