রাজশাহীর পদ্মার চরের একটি গ্রাম চরখিদিরপুর। যেখানে শুরু হয়েছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালা। কিন্তু নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় স্কুলটাকে নিয়ে চলে আসতে হয়েছে শহরের তালাইমারী এলাকায়। এখন চরখিদিরপুরে আর কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। তবে এখনও এই চর থেকে কিছু ছেলেমেয়ে নদী পাড় হয়ে আলোর পাঠশালায় আসে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আসুরা।
আসুরা এখন রাজশাহী আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিন বোনের মধ্যে আসুরা তৃতীয়। বড় দুই বোনও আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা করেছে।
আসুরার বড় বোনকে অষ্টম শ্রেণি ও মেজো বোনকে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। মেজো বোন মাসুরা বিয়ের পরেও আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা অব্যাহত রাখে। এখান থেকেই এসএসসি পাস করেছে। কিন্তু তার আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি। তবে আসুরা চায় এসএসসি পাস করে সে কলেজে ভর্তি হবে। তারপরে অনার্স পড়বে। পড়াশোনা শেষ করে সে একজন শিক্ষক হতে চায়। চরখিদিরপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় করার স্বপ্ন আছে তার।
স্বপ্নপূরণে যেকোনোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় আসুরা। এমন স্বপ্নের কারণ জানতে চাইলে সে বলে,‘ আমি চাই আমার গ্রামের মেয়েরাও পড়াশোনা শিখুক। এখানে প্রায় সবাইকে ক্লাস ফাইভ পাস করেই বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার দুই বোনকেও আমার বাবা স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমাকেও দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমি প্রতিবাদ করি এবং পড়াশোনা করব বলে জানিয়ে দিয়েছি। আমি বাল্যবিয়ের ভয়াবহতা অনেককে বোঝাই কিন্তু কথা কেউ শোনে না। আমি যখন পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হব তখন নিশ্চয়ই আমার কথা তারা শুনবে।’
নদী ভাঙনের মতো আসুরার স্বপ্ন ভঙ্গ না হোক এটা আমাদের প্রত্যাশা। সে যেন একজন অদম্য মেধাবী হয়ে চরখিদিরপুরের শিক্ষক হতে পারে।