কাজ করে পড়াশোনা করলেও স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না মনি

রাজশাহী আলোর পাঠশালায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব আলী মনি।

নামটা তার শিহাব আলী মনি। কিন্তু পারিবারিক অভাবে বাবা-মায়ের চোখের মণির মতো আদরে বড় হতে পারেনি সে। মনি রাজশাহী আলোর পাঠশালায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত তার প্রায় ২৫ জন বন্ধু ঝরে পড়েছে। মনি টিকে আছে নিজের শক্ত মনোবলের জন্য। এগিয়ে যাচ্ছে নিজের ইচ্ছা শক্তিতে। তার শ্রেণির ছেলে শিক্ষার্থী বলতে মনি একাই।

ছোট বেলা থেকে পরিবারের অভাব দেখে আসছে সে। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল অনেকবার। বাবা অটো চালান, মা গৃহিণী। ছোট দুজন বোন আছে। স্কুলে বড় কোনো ছুটি পেলেই অন্যের দোকানে কাজে চলে যায় সে। গত রোজায় কসমেটিকসের দোকানে কাজ করেছে মনি। অনেক রাত পর্যন্ত দোকানে কাজ বাসায় ফিরেছে তখন। যে আয়টুকু করে সেটা দিয়ে তার পড়াশোনায় খরচ করে। এভাবেই সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে মনি।

কাজ করে পড়াশোনা করলেও স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না মনি। গত বছর শতভাগ উপস্থিতি ছিল তার। কেন কাজ করে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘আমার বোন দুইটাকে আর আমার মাকে কোনো কিছু কিনে দিতে ইচ্ছে করে। এবার ঈদেও ওদের জামাকাপড় কিনে দিয়েছি। বাবা তো অটো চালিয়ে এত কিছু করতে পারেন না। আমার লেখাপড়ার খরচই ঠিকমতো দিতে পারেন না। দশম শ্রেণির সহায়ক বইও কিনেছি নিজের টাকায়।’

পড়াশোনাতেও বরাবরই ভালো করে মনি। সে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়ে যেকোনো একটা ব্যবসা করতে চায় সে। এখনই কেন ব্যবসা করতে চায় জিজ্ঞেস করলে বলে, এখন থেকে শিখে রাখলে বড় হয়ে একজন বড় ব্যবসায়ী হওয়া সহজ হবে। তখন তার বাবাকে অটো চালাতে হবে না। মাকে সংসারের অভাবে থাকা লাগবে না। তার নিজ খরচে সে তার বোনদের পড়াশোনা করাতে পারবে বলে তার বিশ্বাস।

মনির মতো কাজ করতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়েছে। থেমে যায়নি শুধু মনি। মনি এভাবেই প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় একদিন হয়তো আসলেই সবার চোখের মণি হয়ে উঠবে সে।