উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করছে আবির

প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে উপহার হিসেবে হিসেবে বই গ্রহন করছে আবির হোসেন।

ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন মেঘনার চরে বসবাস আবির হোসেনের। তার বাবা একজন কৃষক। আট ভাই বোনদের মধ্যে আবির সবার ছোট। স্কুল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দুরে আবিরের বাড়ি। পায়ে হেঁটে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় আবির। মদনপুর আলোর পাঠশালার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির হোসেন। শ্রেণিতে মেধায় বরাবরই প্রথম সে। পড়াশোনা পাশাপাশি সে বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করে থাকে। ব্যবসায় শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার।

আবির লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বেশ উৎসাহী। খেলাধুলার মধ্যে সে ক্রিকেট, ফুটবল ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় পারদর্শী। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আবির বেশ আলোচিত। কবিতা আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান, ও অভিনয়ে তার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মদনপুর আলোর পাঠশালা কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া-প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে কয়েকটি ইভেন্টে একাধিকবার প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে।

বার্ষিক ক্রীড়া-প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে পুরুস্কার নিচ্ছে আবির হোসেন।

দশ সদস্যর পরিবার আবিরদের। নানা টানাপোড়েনের মধ্যে পরিবারের ভরণপোষণ জোগাতে খুবই কষ্ট করতে হয় আবিরের বাবাকে। তাই স্কুল বন্ধের দিনে আবির জেলের কাজ করে অর্থ উপার্জন করে বাবাকে সংসার চালাতে সাহায্য করে। তারপরেও আবিরের লেখাপড়ায় কোন অবহেলা নেই।

দারিদ্র্যের কারণে তার বাবা তাকে লেখাপড়া করাতে ইচ্ছুক ছিল না। তাই প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তার বাবা লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। তখন আবির স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নদীতে যাওয়া শুরু করে। এরপর মদনপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষকগণ ঘটনাটি জানতে পেরে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কিন্তু আবির বাবা তার অভাবের সংসারে আবিরকে লেখাপড়া করাতে অনাগ্রহ দেখায়। তখন আলোর পাঠশালার শিক্ষকগণ তাকে অভয় দিয়ে বলেন, আলোর পাঠশালায় লেখাপড়া করতে কোন খরচ হয় না। আপনি ওকে শুধু নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠাবেন, বাকি দায়িত্ব আলোর পাঠশালার। এ কথায় আশ্বস্ত হয়ে আবিরকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে উৎসাহী হন। পরে ভর্তি করে দেন। সে থেকেই আবিরের মাধ্যমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। এখন আবির ৮ম শ্রেণির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। এখন সাফল্যের সঙ্গে লেখাপড়া সমাপ্ত করে একজন সফল উদ্যোক্তা হবে এটাই তার স্বপ্ন।