বরেন্দ্র অঞ্চলের গহিনে অবস্থিত বাবুডাইং গ্রামের কোল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী কানচন সাইচুরি শিশুকাল থেকেই ছবি আঁকতে পটু। বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির এই নিয়মিত শিক্ষার্থী যেকোনো ছবি মুহূর্তের মধ্যে আঁকতে পারে। কানচন সাইচুরি তার জমজ ভাই অর্জুন সাইচুরির সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে পড়ে। তারা দু'জনেই ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং অসাধারণ ছবি আঁকতে পারে। বাবা লগেন সাইচুরি এবং মা গেনোদা মুরমুর। ছবি আঁকার পাশাপাশি কানচন আলোর পাঠশালার সাংস্কৃতিক দলের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বিদ্যালয়ের যেকোনো কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে আয়োজিত জাতীয় দিবস কেন্দ্রিক বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে প্রতি বছরই পুরস্কৃত হয়ে আসছে।
ছবি আঁকতে কেন ভালো লাগে, এমন প্রশ্নের জবাবে কানচন সাইচুরি জানায়, ' আমি ছোট থেকেই ছবি আঁকতে ভালোবাসি। ছোটবেলায় আমরা খেলার ছলে ধুলায় এবং বালিতে বিভিন্ন রকমের ছবি আঁকতাম, এখনো সময় পেলে আঁকি। আমি আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ব বোধ করি যে, এখানকার শিক্ষকগণ আমাদেরকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করে থাকেন।' কানচনের বাবা লগেন সাইচুরি একজন দিনমজুর, তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করেই তিনি পরিবার চালান। তিনি তাঁর জমজ দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাতে খুবই আগ্রহী। লগেন সাইচুরি বলেন, আগে হামাঘে এলাকায় কোনো রকম স্কুল ছিল না, তাই হামরা লেখাপড়া শিখতে পারিনি। কিন্তু প্রথম আলো হামাঘে পাড়াতে একটা ইসকুল করে দেওয়ায় আজ হামাঘে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে। হাই ইসকুল হামাঘে পাড়া থেকে ১২ মাইল দূরে হওয়ায় আগে ছেলে-মেয়েরা বেশি দূর লেখাপড়া করতে পারতো না এবং ঝরে পড়তো। এখন আলোর পাঠশালাতে মাধ্যমিক শাখা হওয়াতে অনেকটা ঝরে পড়া কমে এসেছে। হামার ছেলে উচ্চশিক্ষা লাভ করলে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর কানচনকে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে কানচন মেধাবী। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে এবং যথাযথভাবে পড়ালেখা করে থাকে। আমি তার মঙ্গল কামনা করি। আশা করি সে অনেক বড় হবে এবং নিজ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবে। সহকারী শিক্ষক বিমল হাসদাকও কানচনের মেধার প্রশংসা করেন।