‘সক্কলের কাছে চাওয়া, হামার ছাওয়ালটা য্যান ভালা রেজাল্ট করে’

মো. উমর ফারুক

কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার খাসের চরের ছেলে মো. উমর ফারুক। শিশু থেকেই সে পড়ালেখার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। কিন্তু ঐ চরে কোন বিদ্যালয় ছিল না। লেখাপড়া করার কোন মাধ্যম ছিল না। তার বাবা-মা জানতেন যে, পাশ্ববর্তী চরে 'প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা' নামে একটি বিদ্যালয় আছে। সেখানে ভালো পড়াশোনা হয়। আর এ চরেই ফারুকের নানার বাড়ী। তাই ফারুকের বাবা-মা তাকে তার নানার বাড়িতে রেখে দিলেন পড়ালেখা করার জন্য। সে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় ভর্তি হলো। পড়ালেখা শুরু হয়ে গেল। কিছু দিনের মধ্যেই পড়ালেখায় সবার সেরা হয়ে উঠে।

পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ আলোর পাঠশালার শিক্ষকবৃন্দ বুঝতে পারেন। কিন্তু ফারুক তার নানার বাড়িতে কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। তাকে তারা বিভিন্ন কাজ কর্মে নিয়োজিত করে। মাঠে গরু চড়াইতে দিত, ফসল কাটতে দিত, এমনকি গরুর জন্য ঘাস সংগ্রহ করার কাজ করতে হতো। সব কাজ করেও পড়ালেখার আগ্রহ হারায় নি ফারুক। পড়ালেখা চালিয়ে গেছে নিজের ইচ্ছায়।

ফারুক যখন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেয়, শেষ পরীক্ষার দিনও তাকে মাঠে গরু চড়াতে যেতে হয়েছে। যার কারণে একটি বছর তার জীবন থেকে চলে যায়। পরবর্তী বছর সে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে সবার সেরা ছাত্রে পরিণত হয়। এ সময় তার পড়ালেখার গতি দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। শ্রেণির সবাই তাকে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচিত করে। বার্ষিক পরীক্ষা প্রথম স্থান অধিকার করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়।

মো. উমর ফারুক

পড়ালেখার পাশাপাশি সে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত ছিল। ফুটবল এবং ক্রিকেট উভয় খেলায় তার পারদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। জেএসসি পরীক্ষায় সে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। সফলতার সঙ্গে তার চলমান গতি সবাই লক্ষ্য করে। নবম, দশম পেরিয়ে এখন সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার এই পথ চলার ক্ষেত্রে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। ফারুকের পড়ালেখার বিষয়ে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। ফারুককে ফ্রি এসএসসি কোচিং করারও ব্যবস্থা করেন।

উমর ফারুক এর বাবা বলেন, ‘ছাওয়ালটা যহন বাড়িতে আহে, দেহি শুধু বই পড়ে আর বই পড়ে। সক্কলের কাছে হামার চাওয়া, ছাওয়ালটা য্যান ভালা রেজাল্ট করে।’