প্রাইভেট কোচিং না পড়েই মাধ্যমিকে শতভাগ পাস
সকালের সূর্য ওঠার আগেই হাসুয়া হাতে নিয়ে ঘাস কাটার জন্য মাঠে বের হয় মোহাম্মদ মামুন আলী নামে দুই শিক্ষার্থীকে। গো-খাদ্য রেখে নদীতে গোসল করে স্কুলের জন্য প্রস্তুত হতে হয়ে তাদের। স্কুল থেকে এসে বিকালে গরু-মহিষ চড়াতে যায় তারা। চড়ানোর ফাঁকে-ফাঁকে বিকেলের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায়ও মেতে থাকে। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে বই নিয়ে বসে— এই হলো তাদের দিনলিপি।
অপরদিকে নবম শ্রেণিতে থাকতে বিয়ে হয় মাসুরা ও রাবেয়া খাতুনের। বিয়ের পর মাসুরার স্বামী তাকে পড়াতে রাজি হয়নি। এক বছর পরই তাদের বাচ্চা হয়। বাচ্চা নিয়েই মাসুরা স্কুল করত এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় কেন্দ্রর বাইরে শাশুড়ির কাছে বাচ্চা রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আর রাবেয়ার শাশুড়ি স্কুল দূরে বলে বাড়ি থেকে বের হতেই দিতে চায়নি। পরে রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলমূখী করে। স্কুলে নিয়মিত হওয়ার পর তারা ৪ জনই ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সবাই কৃতকার্য হয়। এদের মধ্যে মো. মামুন আলী পেয়েছে জিপিএ-৪.৭২, মোসা. রাবেয়া খাতুন পেয়েছে জিপিএ-৪.১১, মোসা. মাসুরা খাতুন পেয়েছে জিপিএ-৩.৯৪, মোহাম্মদ মামুন আলী পেয়েছে জিপিএ-৩.৮৩। এই চারজন ২০১৯ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভালো ফল করেছিল।
রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মোসা. রেজিনা খাতুন বলেন, ‘যারা এবার পাস করেছে, লেখাপড়ার প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহ ছিল। পরিবারের নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। পরিবার থেকে যদি লেখাপড়া করার আরও সুযোগ পেত, তাহলে তারা আরও ভালো ফলাফল করতে পারত। তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
পরীক্ষায় পাস করার পর মামুন আলী জানায়, তারা ৪ জনই কোনোদিন কোচিং বা প্রাইভেট পড়েনি। প্রবল আগ্রহ ও স্কুলের শিক্ষাই তাদের ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করেছে। প্রথম আলো ট্রাস্ট না থাকলে তাদের লেখাপড়া চলানো সম্ভব হতো না। তাই তারা রাজশাহী আলোর পাঠশালা শিক্ষকগণ এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।