বিসিএস দিয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নোমান বাদশার

মেঘনাপাড় ধীবর আলোর পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী নোমান বাদশা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত মেঘনাপাড় ধীবর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী নোমান বাদশা। সে ২০১৮ সালে মেঘনাপাড় ধীবর আলোর পাঠশালা থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে ডা. আব্দুল হক আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এই স্কুল থেকে ২০২৪ সালের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৯ পেয়ে পাস করে।

নোমানের বাবা মো. সিরাজ বেপারী পেশায় একজন ক্ষুদ্র জেলে। ৬৫ বছর বয়সে কোনোরকমে একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাঝে মধ্যে নোমান বাদশাও তার বাবার সাথে নদীতে মাছ ধরার কাজে সহযোগিতা করে। ঝড় তুফান উপেক্ষা করে নদী থেকে মাছ ধরে অতিকষ্টে তাদের সংসার চলে। সিরাজ বেপারীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় দুই ছেলে এবং দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা সবাই নিজে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। নোমান বাদশা সবার ছোট, তাই তার লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হয় তার বৃদ্ধ বাবাকে।

নোমান বাদশা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এই মুহূর্তে তার বাবার পক্ষে পড়াশোনা খরচ বহন করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরেও বাদশা কিছু ছেলেমেয়েকে প্রাইভেট পড়িয়ে তার পড়াশোনা খরচ চালিয়ে যাচ্ছে।

নোমান বাদশার মা মরিয়ম বেগম একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, আমার ছেলে নোমান বাদশা পড়াশোনা করে বড় কিছু হতে চায় কিন্তু আমাদের অভাবের সংসার। আমাদের চলতে অনেক কষ্ট হয়, তাই নোমান বাদশা বাবা তার পড়াশোনা বন্ধ করে নদীতে মাছ ধরতে নিয়ে যেতে চায়। মা হিসেবে আমার ছেলের লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। নোমান বাদশা আগামী ২০২৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।

নোমান বাদশা জানায়, তার আশা সে এইচএসসি পরীক্ষা গোল্ডেন-এ প্লাস অর্জন করবে। তার স্বপ্ন, ভবিষ্যতে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার) দিয়ে একজন আদর্শবান শিক্ষক হবে। শিক্ষক হয়ে তার এলাকার অবহেলিত, শিক্ষাবঞ্চিত অসহায় জেলে পরিবারের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে।