গল্প, কবিতা ও ছড়ার বই পেল টেকনাফের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দমদমিয়া আলোর পাঠশালার ১৫১ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।

নাফ নদীর তীর ঘেঁষা লাবিয়া আকতারের বাড়ি। সে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের আলোর পাঠশালা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।শ্রেণিকক্ষের বই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়া হয়নি তার। বাবা একজন জেলে। বই কিনে পড়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। তবে হাতি আর শিয়ালে গল্প পড়েছিল। সে গল্পটি খুবই ভালো লেগেছিল। লাবিয়া বলে, ‘এবার বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে যে  বই পেয়েছি, সেগুলোতে অনেক গল্প, কবিতা ও ছড়া রয়েছে। এসব পড়ে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি অনেক কিছুই শিখতে ও পড়তে পারব। এতেই আমি খুশি।’

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী খতিজা বেগমও বলল একই ধরনের গল্পের কথা। ইচ্ছে থাকলেও দারিদ্র্যতা কারণে বই কিনে পড়া হয় না। তবে বড় রাজা ও ছোট রাজার একটি গল্প পড়েছিল। খতিজা জানায়, ‘আমি আরও গল্প পড়তে চাই। আশা পূর্ণ হয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিচ্ছেন বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুখসানা মিলি।

সামিট গ্রুপের সহায়তায় দমদমিয়া আলোর পাঠাশালাটি পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এই স্কুলে গত সোমবার বেলা ১টার দিকে বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় বই বিতরণ করা হয়। দমদমিয়া আলোর পাঠশালার ১৫১ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা ও বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুখসানা মিলি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশস সিনিয়র অফিসার (মার্কেটিং) নাজমুল আহসান, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদুল আলম, প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন ও আলোর পাঠশালার শিক্ষকবৃন্দ।

দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপজেলার আরও চারটি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বই দেওয়া হয়। মোচনী আদর্শ বিদ্যাপীঠের পক্ষে মোহাম্মদ হাসান, কেরুনতলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে মোহাম্মদ রফিক, ইডেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পক্ষে আব্দুল মালেক ও ইকরা কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পক্ষে শামসুল হক বইগুলো গ্রহণ করেছেন।

বিকাশ সূত্র জানায়, গত ছয় বছর ধরে বইমেলার সঙ্গে বিকাশের সম্পৃক্ততা। আর গত তিন বছর দেশের বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করে আসছে বিকাশ। গত তিন বছরে ৭২৫০০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। মেলায় আসা পাঠক, লেখক, দর্শনার্থীদের থেকে পাওয়া অনুদানের বইয়ের সঙ্গে বিকাশের পক্ষ থেকে আরও বই কিনে পৌঁছে দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে।

বিকাশের উদ্যোগে বই বিতরণের চতুর্থবারের এ আয়োজনের এবার সঙ্গী হয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এ বছর প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের সহযোগিতায় অনুদান পাওয়া বইগুলো প্রথম আলো ট্রাস্ট পৌঁছে দিচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে। টেকনাফের এই পাঁচটির প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঁচশত করে মোট দুই হাজার পাঁচশতটি বই বিতরণ করা হয়েছে।

 মোচনী আদর্শ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান বলেন, বইগুলো শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে। যেসব শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস নেই তারাও আগ্রহ দেখাবে।

আলোর পাঠশালা স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদুল আলম বলেন, শিশুদের ছড়া, গল্প ও কবিতার বই বিতরণ করায় বিকাশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। প্রথম আলো ট্রাস্ট এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। শিশুরা বর্তমানে স্কুলমুখী। শিশুদের এভাবে বই বিতরণ করে উৎসাহিত করার জন্য ধন্যবাদ।

বিকাশ করপোরেট কমিউনিকেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুখসানা মিলি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার শিশুরা বই মেলা থেকে কবিতা, ছড়া ও গল্পের বই কিনে পড়তে পারলেও, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এমন সুযোগ হয় না। বইমেলা থেকে সংগৃহীত বই আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতেই এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।