ক্লাসেও প্রথম, কাজেও প্রথম সুমাইয়া

রাজশাহী আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া। নওগাঁ জেলার মান্দা থানার এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। অভাবে তাড়নায় সুমাইয়ার বাবা অনেক বছর আগে রাজশাহী শহরে এক বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। বাবা-মা, দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে সুমাইয়ার পরিবার। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সুমাইয়া দেখে আসছে অভাব অনটনে চলে তাদের সংসার। রাজশাহী শহরের নদীর ধারে বস্তিতে বাস করে তার পরিবার। আর এই বস্তিতে বাস করার সুবাদে সুমাইয়া দেখছে জীবনের নানা প্রতিকূলতা।

সুমাইয়া জানায়, ‘নদীর ধারে বস্তিতে অনেক বাজে লোক আছে। অনেক বখাটে ছেলে আছে। তারা অনেকভাবে আমাদের বিরক্ত করে। ওদের জন্য স্কুল ছাড়া কোথাও যাই না আমরা। আমার খুব ইচ্ছে করে এদের শাস্তির আওতায় আনতে। এ ধরনের বখাটেদের শাস্তি দিতে হলে আমাকে প্রশাসনে যেতে হবে। হতে হবে আইনের লোক। তাই আমার স্বপ্ন হলো, বড় হয়ে আমি পুলিশ অফিসার হব। যাতে করে এই দুষ্টু লোকেরা কোন মেয়েকে স্কুলে বা রাস্তাঘাটে বিরক্ত করলে তাদের ধরে শাস্তি দিতে পারি।’

সুমাইয়া পারে না এমন কোন কাজ নাই বললেই চলে। সে অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম। লেখাপড়ায় ভালো শুধু এমন না, সব কাজেই সুমাইয়া প্রথম। খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, নাচ, গান, হাতের কাজ ইত্যাদি অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমের তার কোনো জুড়ি নেই। সকাল বিকেল বাড়ির গরু গুলিকে খেতে দিতে হয় তাকে। সঙ্গে বাড়ির বেশির ভাগ কাজ করতে হয়। সকল কাজে প্রথম হওয়ার পরও সুমাইয়াকে নিয়ে বড় কোনো স্বপ্ন দেখে না তার পরিবার। তার পরিবার বিয়ে দিয়ে দিতে চায়। হয়তো অভাবের কারণেও তারা এমনটা ভাবেন, কে জানে!

যা হোক, সুমাইয়ার স্বপ্নপূরণে পরিবারকে বোঝানো ও ভালো করে পড়াশোনার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ রাখে রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা। সুমাইয়াও তার স্বপ্নের পথে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত ক্লাসে আসে, ফলও আশানুরূপ। সুমাইয়ার মতো এ সকল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখায় এবং তাদের স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সর্বদা উজ্জীবিত করে চলেছে আলোর পাঠশালা।