বাবার দেখা না পেলেও এক টুকরো স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে জেসমিন

রাজশাহী আলোর পাঠশালার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন খাতুন।

জেসমিন খাতুন যখন মাতৃগর্ভে, তখন বাবার সঙ্গে মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। জন্মের পর যখন তার বুদ্ধি হলে বাবার কথা শুনেছে কিন্তু বাবার মুখ এখনো দেখতে পায়নি রাজশাহী আলোর পাঠশালার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন। তার জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুরে সোনাইচন্ডি গ্রামে। বাবা এখন ঘর পেতেছেন অন্য মহিলার সঙ্গে।

বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদের কয়েক মাস পর পৃথিবীতে আসে জেসমিন। নবজাতককে নিয়েই জেসমিনের মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৫ বছর অতিক্রম করেন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে ভালো টাকা মাইনের সুযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জগপাড়া গ্রামে আসেন জেসমিনের মা। এখানে অন্যের বাড়িতে থেকে জেসমিনকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করান । কিন্তু সেখানে নানা বধার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। আশপাশের লোকজনের খারাপ নজর পড়তে থাকে জেসমিনের মায়ের দিকে। পরে পুঠিয়া থেকে তল্পিতল্পাসহ জেসমিনকে নিয়ে রাজশাহী শহরে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেন।

রাজশাহী আলোর পাঠশালার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন খাতুন।

বর্তমানে শহরে সাধুর মোড়ে অবস্থিত একটি খাবার হোটেলে কাজ নিয়েছেন জেসমিনের মা। প্রতিদিন সকাল ৭টা ৩০মিনিটে হোটেলে গিয়ে রাত ১১টা থেকে ১২ টায় বাড়ি ফেরেন। সারা দিন কাজ করে বাড়ি এসে দেখেন মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। সকালে কোনো রকম নাশতা তৈরি করে আবার কাজে চলে যান। দেখা হয় শুধুমাত্র সকালে একবার।   

২০২২ সালে রাজশাহী আলোর পাঠশালায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করান। স্কুল পোশাক ও সহায়ক বইসহ নানাভাবে সাহায্য করেন রাজশাহী  আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা। স্কুলে নিয়মিত হয়ে বর্তমানে জেসমিন সেরা তিনের একজন।

কোনো কারণ ছাড়াই মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষে কাঁদতে থাকে জেসমিন। শ্রেণি শিক্ষক কারণ জানতে চাইলে জেসমিন বলে, ‘বাবার কথা মনে হচ্ছে। সবার বাবা আছে, আমার বাবা বেঁচে থেকেও আমি কোনো দিন বাবার মুখ দেখতে পাইনি। কোনো দিন বাবা বলে ডাকতেও পারিনি। বাবার সঙ্গে কোথায় ঘুরতে যেতে পারি না। মাকেও কাছে পাই না । সেই সক্কালে কাজে যায় আবার আমি ঘুমালে আসে। অনেক কষ্ট আমার স্যার।’

দুঃখ কষ্টের মধ্যেও এক টুকরো স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগোচ্ছে জেসমিন। তার স্বপ্ন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে।  মানুষের সেবা করবে।