ফোহাদ হাসান গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। সে পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। মা ও দুই ভাই নিয়ে তাদের পরিবার। দুই ভাইয়ের মধ্যে ফোহাদ হাসান ছোট। ফোহাদের বয়স যখন তিন, তখন তার বাবা মারা যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের সংসারে অভাব দেখা দেয়। ফলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া বড় ভাইয়ের ওপর সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে। তার মা ও ভাই দুজনে মিলে সংসার দেখাশোনা করে। অভাবের কারণে তার ভাই স্কুলের পাশাপাশি অন্যের জমিতে কাজ করে কিছু টাকা আয় করতে থাকে। মা বাড়িতে পানির সেচপাম্প চালিয়ে এবং হাঁস মুরগি পালন করে যা টাকা আয় করে সেগুলো দিয়ে মা ছেলে মিলে কষ্টের সংসার চালায় এবং দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালায়।
ফোহাদ হাসানের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ফোহাদ হাসান যত দূর পর্যন্ত পড়তে চায়, সেই পর্যন্ত পড়ুক, আমার কোনো আপত্তি নাই। আমার স্বপ্ন একটাই ফোহাদ হাসানকে কষ্ট করে হলেও মানুষের মত মানুষ করতে চাই। যতই কষ্ট হোক তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে তার স্বপ্ন পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে সে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও সমাজের সেবা করতে পারে।’
গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিদ্যোৎসাহী মো. আয়নাল হক তোতা বলেন, ‘ফোহাদ হাসান সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। সে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্কুলে আসতে না চাইলে, তাদের স্কুলে আসতে নিজেই উদ্যোগ নেয়। নিজের পড়াশোনার বাইরে অন্য ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে সহায়তা করে। এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধের ব্যাপারে দশম শ্রেণির ছাত্র ফোহাদ হাসানের ভূমিকা অন্যতম।’
ফোহাদ হাসান বলে, 'আমার মা ও বড় ভাই অনেক কষ্ট করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছে। আমি ভালোভাবে লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যেন মা ও ভাইয়ের আশা পূরণ করতে পারি। বড় হয়ে আমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে দেশের ও সমাজের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মায়ের হাত শক্ত করতে চাই। প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত এই বিদ্যালয় হতে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। বিনা মূল্যে পড়াশোনা করতে পরছি। তাই সকলের নিকট আমার কৃতজ্ঞতা রইল।’