‘সংকোচ, ভয় কোনটিই নয়, চিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়’

দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় প্রথম আলো যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের আটটি এবং রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর আগে এই ১২ জেলার প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার ২৪ সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর লালমাটিয়ায় তিন দিনব্যাপী একটি আবাসিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় অংশ নেন প্রথম আলো ট্রাস্টের বাবুডাইং আলোর পাঠশালার সিনিয়র শিক্ষক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি সাঈদ মাহমুদ। তিনি লিখেছেন কর্মশালার নানা অভিজ্ঞতা।

তিন দিনব্যাপী কর্মশালা শেষে অতিথিদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীরা।

যক্ষ্মা একটি রোগ, সাধারণভাবে শুধু এটাই জানতাম। কিন্তু ২২ থেকে ২৪ জুন তিন দিনব্যাপী আবাসিক কর্মশালার মাধ্যমে আমি একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ লাভ করেছি। যক্ষ্মা কী, কেন হয়,কীভাবে ছড়ায়, যক্ষ্মা শরীরের কোথায় হয়, লক্ষণ কী, কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধই বা কেমন?— এ রকম নানা অজানা তথ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে।

যক্ষ্মা প্রাচীন রোগগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ। বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ নতুনভাবে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয় এবং যক্ষ্মার কারণে প্রায় ৪২ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কারও হতে পারে। ফুসফুসের যক্ষ্মা বায়ু বাহিত, যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। যক্ষ্মা বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ ঘন জনবসতি, স্যাঁতসেঁতে ও পর্যাপ্ত আলো বাতাসহীন জায়গা।

তিন দিনব্যাপী কর্মশালা শেষে অতিথিদের হাত থেকে সনদ নিচ্ছেন সাঈদ মাহমুদ।

এ ছাড়া ফুসফুসের বাইরের যক্ষ্মা শরীরের যেকোনো স্থানে আক্রান্ত হতে পারে। রোগটি সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদ থেকে নীরবে আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা। সংকোচ কিংবা ভয় নয়, লক্ষণ দেখামাত্র বা সন্দেহ হলে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল বা টিবি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খুব সহজে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

যক্ষ্মা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা ও জ্ঞানার্জন করেছি। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতার মাধ্যমে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে মানুষকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করব। এ ক্ষেত্রে বন্ধুদের মাঝে তথ্য বিনিময় করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল এলাকায় বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে চেষ্টা করব। প্রয়োজনে যক্ষ্মা বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও এলাকার জনপ্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ‘নীরব ঘাতক যক্ষ্মা, সচেতনতায় দিতে পারে রক্ষা’।