সুমাইয়ার স্বপ্ন সারথি 'গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা’

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা: সুমাইয়া আক্তার ইতি।

'আমার জীবনে শত কষ্ট হলেও লেখাপড়া চালিয়ে যাব। কারণ আমি নিজের জীবন ও সমাজের অবহেলিত মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাই। সেই সঙ্গে অর্থের অভাবে যারা অল্প বয়সেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই'—কথাগুলো গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা: সুমাইয়া আক্তার ইতির।

সুমাইয়া আক্তার লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী। সে স্কুলের নিয়মিত ছাত্রী। তারা তিন ভাই বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা ঢাকায় মানুষের বাসায় কাজ করে। বাবা ঢাকায় রিকশা চালায় এবং মাঝে মধ্যে এসে ছেলে মেয়েকে দেখে তাদের চাল, ডাল কিনে দিয়ে যায়। এখন সুমাইয়া আক্তার ইতি ও তার পাঁচ বছরের ছোট ভাই থাকে পানিশাইল আবাসন প্রকল্পের একটি ঘরে। পাশের ঘরে থাকে তার নানা নানী। নানা-নানী তাদের দেখে রাখে কিন্তু আর্থিক কোন সাহায্য করতে পারে না। কারণ তাদের অবস্থাও নাজুক।

নিজ স্কুল প্রাঙ্গণে দাড়িঁয়ে সুমাইয়া আক্তার ইতি।

সপ্তম শ্রেণির সুমাইয়া আক্তার ইতি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না থেকে শুরু করে ঘরের সমস্ত কাজ একাই করে। ছোট ভাইকে খাবার খাইয়ে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে আসে। স্কুল থেকে ফিরে আবার তাকে যথারীতি পড়াশোনা ও বাড়ির সমস্ত কাজ করতে হয়।

সুমাইয়া আক্তারের বাবা মো. ওবায়দুল হক বলেন, আমার মেয়ে গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায় লেখাপড়া করতে পছন্দ করে। এই স্কুলের পাঠদান কর্মসূচি ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বেশ ভালো। প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি স্কুল থাকায় আমার মত হত দরিদ্র মানুষের ছেলেমেয়ের জন্য আশীর্বাদ। গুড়িহারী-কামদেব পুর আলোর পাঠশালায় লেখাপড়া ভালো হয়।

পানিশাইল আবাসনের মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাদের আবাসনের দরিদ্র ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট জায়গা হলো গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা। গরিব মানুষের ছেলে মেয়ের জন্য এর চাইতে ভালো স্কুল আর হয় না। সুমাইয়া আক্তার ইতি গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায় লেখাপড়া করে অনেক কিছু শিখছে।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রাজিত দাস বলেন, '২০২৪ সালে সুমাইয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। ২০২৫ সালের শুরুতে তার বাবা পারিবারিক সমস্যার কারণে তাকে অন্য একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার বাবা আমাকে ফোন করে বলেন, আমার মেয়ে আপনার বিদ্যালয়ে ছাড়া আর কোথাও পড়াশোনা করবে না, তাই তাকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে নিন। সুমাইয়া মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। দারিদ্র্যর সঙ্গে লড়াই করে সে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আবার সুমাইয়াকে ভর্তি করে নিই। সে পড়াশোনায় বেশ ভালো। ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে বলে আশা করি।’