বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় শতভাগ পাস

প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূরে সঙ্গে এ বছর এসএসসি পাস করা ছয় শিক্ষার্থী।

এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্রভূমির গহিনে অবস্থিত এই বিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সবাই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোল সম্প্রদায়ের সন্তান।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলোর পাঠশালায় পাঠ গ্রহণ করে এবার ছয়জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ছয়জনেই পাস করেছে। শিমন্ত টুডু ৩.৬১, সিমন সাইচুরি ৩.৩৩, সবুজ মুরমু ৩.০০, সংগীতা টুডু ২.৯৪, সরোমনি সরেন ২.৭২ ও সাগর সরেন ২.২২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ছয়জনের মধ্যে দুজন মেয়ে ও চারজন ছেলে।

মিষ্টি বিতরন করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ।

বাবুডাইং গ্রামের মোড়ল কার্তিক টুডু বলেন, ‘হামার পোতাও পরীক্ষা দিয়্যাছিল এবার। ওই সবার চাহিতে ফল ভালো কইর্যাছে। হামার খুব খুশি লাগছে। সবাই যেন কলেজে ভর্তি হয় সে আশা করি। আর বাবুডাইং স্কুলকেও ধন্যবাদ। ওদেরকে দেখেশুনে রাখাসহ পড়ালেখা করানোর জন্য।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর বলেন, পিছিয়ে পড়া এ এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় পিছিয়ে থাকে। এখনো অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর চেয়ে মাঠে গরু-ছাগল চরাতে, একটু বড় ছেলেমেয়েদের মাঠে কাজ করতে পাঠাতেই বেশি আগ্রহী। কেননা এতে অসহায় পরিবারগুলোতে খাবারের জোগান হয়। শিক্ষার্থীরা বছরের বেশির ভাগ সময়ই পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ জোগাতে কাজ করে। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি। তাদের পেছনে লেগে থেকেছি। টেস্ট পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আগ্রহী ও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তাদের কোচিং ক্লাস করিয়েছি। এমনকি প্রায় চার মাস তাদের দুপুরের খাবার দিয়ে স্কুলে রাখার চেষ্টা করেছি। যার ফলে আজ সবাই পাস করেছে।

মিষ্টি বিতরন করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ।

বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫২ জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করানো হয়।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫—দুটিই কমেছে। পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ এবং জিপিএ–৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আর জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৯৫।