রাজধানী ছেড়ে আবার পড়াশোনায় সংগ্রামী হাসিবুল

হাসিবুল ইসলাম

রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুরে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম হাসিবুল ইসলামের। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় সে। নদী ভাঙনের কারণে ধীরে-ধীরে তাদের আবাদি জমি শেষ হয়ে যায়, এমনকি শেষ ভরসা ভিটে মাটিও। অন্যের জমি লিজ নিয়ে কোনোমতে থাকার জায়গাটুকু জোগাড় হয়। কিন্তু বছর শেষে আর জমির লিজের টাকা মালিককে দিতে পারে না। পরিবারের অভাব কষ্ট দেখে বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরার চিন্তা করে হাসিবুল।

পরিবারের হাল ধরার চিন্তা থেকে ২০১৮ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্কুল ছেড়ে পাড়ি জমায় রাজধানীতে। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনের চাকরি শুরু করে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে গ্রামে। সবেমাত্র কোমল হৃদয়ের কৈশোর শুরু হয়েছে। ভরা নদীতে ঝাঁপ, নৌকা নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা, জাল দিয়ে মাছ ধরা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করা — এ সব স্মৃতি কীভাবে ভুলে থাকবে সে!

বর্তমানে হাসিবুল চাকরি করে লেখা-পড়ার খরচ জোগাড় করছেন এবং পরিবারকে সামান্য সহযোগিতা করছেন।

আবেগের বশে চাকরিতে গিয়ে বুঝতে পারে, লেখাপড়া ছাড়া জীবনে কোনো উন্নতি করা সম্ভব না। ভালো কোনো চাকরিও না। তাই সে আবার লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়। সকালে বের হয়ে রাতে এসে বই পড়ার মতো শক্তি থাকে না। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও প্রথম আলো ট্রাস্ট আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের পরামর্শে সে আবার গ্রামে ফিরে আসে। আবার নিয়মিত হয় বিদ্যালয়ে।

২০২০ সালে আলোর পাঠশালা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় এবং জাতীয় মেধা তালিকায় সাধারণ বৃত্তি পায়। পরে ভর্তি হয় রাজশাহী শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজে। ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষে থাকা অবস্থায় প্রাণ কোম্পানিতে ডিএসআর পদে চাকরি পায়।  বর্তমানে হাসিবুল চাকরি করে লেখা-পড়ার খরচ জোগাড় করছেন এবং পরিবারকে সামান্য সহযোগিতা করছেন।

জীবনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসিবুল জানায়,‘আমি ঢাকাতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি শিক্ষা ছাড়া জীবনের কোন মূল্য নেই, ভালো কোনো চাকরি নেই। তাই আমি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিতে চাই। বড় একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরব। ছোট ভাই ও বোনকে শিক্ষিত করাব।’