রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রভাতফেরি শেষে নিজেদের তৈরি করা ও আলপনায় রাঙানো শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এ দিবস পালন করা হয়।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহ আগে থেকেই দূর থেকে মাটি নিয়ে এসে শহীদ মিনারের বেদি তৈরি করে। বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। বিদ্যালয়ের মাটির দেয়াল লেপে-পুছে ঝকঝকে তকতকে করে তোলে। এরপর মাটির দেয়াল ও শহীদ মিনারের বেদিতে আলপনা আঁকে শিক্ষার্থীরা। শেষে শহীদ মিনারটি ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলে। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজেরাই তৈরি করে ফুলের ডালা।
গতকাল সকালবেলা হাতে হাতে বুনো ফুল নিয়ে বরেন্দ্রভূমি উঁচুনিচু জমির আলপথ বেয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে এসে জড়ো হয় সকল শিক্ষার্থীরা। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে অংশ নেয় প্রভাতফেরিতে। এসময় ‘ইংরেন বয়হাওয়া ম্যয়মতে রাঙ্গওয়া একুশনা:ফেবওয়ারী, ইং কি আত হিরিইং.... ’ অর্থাৎ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি.... . ’ কোল ও বাংলা ভাষায় একুশের গানটি সকলে গেয়ে হাঁটতে থাকে। প্রভাতফেরির পর সকলে মিলে নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে। আলোর পাঠশালা, প্রথম আলো বন্ধুসভা ও গোদাগাড়ী উপজেলা স্কাউটসের পক্ষ থেকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, দিবসটি উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি ও গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজারুদ্দীন, গ্রাম্য মোড়ল মাধব কোল সরেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর, শিক্ষার্থী শিমন্ত টুডু। ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে শিক্ষার্থী তাহারিমা খাতুন ও সীমা খাতুন। কোল মাতৃভাষায় নাচ-গান পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের কোল সাংস্কৃতিক দল।
শেষে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চিত্রাঙ্কন এবং ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডু বলেন, ‘বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রতিবছরই আমি এ অনুষ্ঠানে আসি। সব অনুষ্ঠান থেকে এটাকে আমার আলাদা মনে হয়। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমার কোল ভাষায় গান হয়, নাচ হয়। দেখে মন ভরে যায়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর জানান, দিনটি উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সপ্তাহজুড়ে থাকে প্রস্তুতি। বিদ্যালয়ের মাটির ঘরগুলো লেপে পুছে ঝকঝকে-তকতকে করা হয়। তাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে আলপনা আঁকে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে শহীদ মিনারের বেদি তৈরির জন্য মাটি নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। এরপর বাঁশ-কঞ্চি ও ফুল দিয়ে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। বেদিতে আলপনা আঁকে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণের। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় গ্রামের নারী-পুরুষ, প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ অতিথিরা।’