স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে চরের মেয়ে জয়নব

ভোলার মদনপুর চরের মেয়ে বিবি জয়নব এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

ভোলার মদনপুর চরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবি জয়নব। চার ভাই বোনের মধ্যে জয়নব সবার ছোট। সে মদনপুর আলোর পাঠশালার ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার বড় তিন ভাইবোন মদনপুর আলোর পাঠশালা থেকে জেএসসি পাস করেছে। তার পিতা জাহাঙ্গীর চৌকিদার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আলোর পাঠশালার এই স্কুলে আগে যদি এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমার ছেলেমেয়েরা এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারত। কিন্তু আগে সেই ব্যবস্থা না থাকায় অষ্টম শ্রেণি পাস করার পরেই তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কারণ আমার মতো অসহায় দরিদ্র লোকের পক্ষে অন্য কোথাও নিয়ে লেখাপড়া করানো সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করার ব্যবস্থা থাকায় আমার মেয়ে জয়নব এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। জয়নব ভালো ফলাফল করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।

আলোর পাঠশালার শিক্ষক বলেন, ‘বিবি জয়নব ২০২০ সালে যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন থেকেই আমরা লক্ষ্য করি সে অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকস। সে প্রতি শ্রেণিতেই প্রথম স্থান অধিকার করত। পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো।’

ভোলার মদনপুর চরের মেয়ে বিবি জয়নব এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আলোর পাঠশালার থেকে বিনা মূল্যে দেওয়া স্কুলড্রেস গ্রহন করার সময় ছবি।

বাবা-মা সহকারে ছয় সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। ফলে পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। তা ছাড়া আশপাশের পরিবেশের কারণে বিয়ের চাপ ছিল। কিন্তু জয়নব এসব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্রত নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। তার স্বপ্ন একজন শিক্ষক হয়ে মদনপুরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা।

জয়নব প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ শেষ করে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে হয়েছে। আসার পথে খালের ওপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। বর্ষাকালে অথবা ঝড়ের সময় প্রায়ই বাঁশের সাঁকো পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতেও  জয়নব নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতো। দুই সেট পোশাক নিয়ে খাল সাঁতরে বিদ্যালয়ে এসে পোশাক পরিবর্তন করে তাকে ক্লাস করতে হতো। এত কষ্ট করার পরেও তার চোখে মুখে রয়েছে স্বপ্নপূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

বিবি জয়নব জানায় ‘মদনপুর আলোর পাঠশালা আমার স্বপ্ন পূরণের ঠিকানা। এই চরে আলোর পাঠশালা না থাকলে আমরা চিরকাল অন্ধকারেই থেকে যেতাম। আলোর পাঠশালার কারণে আজ মদনপুরের অনেক পরিবারের সন্তানই ভোলা সরকারি কলেজসহ অন্যান্য কলেজে অধ্যয়ন করছে। কেউ কেউ চাকরি করছে। অন্যথায় এ সকল ছেলে মেয়েদের ভাগ্যে জুটতো রাখালের কাজ, কৃষি কাজ, অথবা মাছ ধরার কাজ। ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলো ট্রাস্ট ও মদনপুর আলোর পাঠশালাকে।’