‘আমি কোল সম্প্রদায়ের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) মেয়ে। আমাদের সম্প্রদায়ে ছেলেমেয়েরা সাধারণত উচ্চশিক্ষা থেকে অনেক দূরে থাকে। তারা খেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু নিজেকে এগিয়ে নিতে আমি অন্য পেশায় যেতে চাই। একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে পিছিয়ে পড়া এ সম্প্রদায়ের মানুষের চেতনা জাগ্রত করতে চাই। শিক্ষকের সম্মান পেতে চাই।’ কথাগুলো বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির নিতলি টুডুর।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতলি টুডু। তার বাবা একই গ্রামের বাসিন্দা বলোরাম টুডু পেশায় একজন দিনমজুর। তবে পরিবারের তেমন খেয়াল রাখেন না। নিতলির মা জবা মুরমু মাঠে কাজ করে অভাব-অনটনের সংসারটি চালিয়ে নেন। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে নিতলি সবার ছোট। সবার বড় মেয়ে নিপালি টুডু ও ছেলে পবন টুডু চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। দুজনেই বিয়ে করে অন্য সংসার করে। নিতলিসহ অন্য দুই বোন মায়া রানী নবম শ্রেণি ও জলি টুডু সপ্তম শ্রেণিতে বিনা মূল্যে পড়ছে বাবুডাইং আলোর পাঠশালায়।
নিতলী টুডু নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে এবং প্রতিদিনের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে। ফলে শিক্ষকরাও তাকে অনেক ভালোবাসে। পড়াশোনা প্রতি নিতলির আগ্রহ বেশ। ফলে বরাবর শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে সে।
নিতলি টুডুর পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাঁর মা জবা মুরমু বলেন, ‘হামার ছুটু বেটি শিক্ষিত হলে হামার খুব গর্ব হইবেক। কিন্তুক হামারঘে অভাবের সংসারে কতটুক করতে পারবো জানিনা। তবে মাস্টাররা কহ্যাছে, আপনার মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে টাকার সমস্যা হবে না। দরকার হলেই তাঁরা সাহায্য করবে। আর এর প্রমাণতো পাইয়্যাছিই। এ স্কুল থাইক্যা হামার বেটিরা স্কুল পোশাক, করোনার সময় কয়েক দফায় খাবার ও শীতকালে কম্বল পায়্যাছে। ইসকুলে পড়ে বিনা পয়সায়। বেটিরা যুদি একদিন ইসকুলে যাইতে না পারে, তবে মাস্টাররা আইস্যা খোঁজ লেই। হামি শুনেছি, লেখাপড়ায় যারা ভাল ফল করলে প্রথম আলো ট্রাস্ট বৃত্তি দেয়। হামিও আশা করি হামার ছুটু বেটিটা ভালো ফল কইর্যা বৃত্তি পাইবে।’