সাইকেলটাই আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার: মিতু রানী
‘সাইকেল পেয়ে আমি যেন পড়ালেখা করার নতুন করে একটা সুযোগ পেলাম। আমার বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলার রামাপাড়া গ্রামে। আমার বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে আমার খুব কষ্ট হতো। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুল যেতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। ক্লাসে মনোযোগী হতে পারতাম না। এ জন্য আমার খুব খারাপ লাগত। এদিকে সাইকেল কেনার মতো সামর্থ্য আমার মায়ের নেই। পঞ্চম শ্রেণির পাস করার পর নিয়ামতপুর উপজেলা শহরের একটি প্রাইভেট স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। কিন্তু সেখানকার খরচ চালানো আমার পরিবারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যার ফলে আমার লেখাপড়া একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এরই মধ্যে প্রথম আলোর ট্রাস্ট পরিচালিত গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন, গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায় ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। আমার যাতায়াতের সুবিধার জন্য আমাকে স্কুল থেকে একটি সাইকেল দেন। সাইকেল পেয়ে আমি সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারি। ফলে এখন আমি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি। সাইকেল আমার পড়াশোনার সুযোগ করে দিল।’ এভাবেই মনের আবেগ ব্যক্ত করল সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু রানী।
সাইকেল পেয়ে আমি ও আমার মেয়ে খুব খুশি। আমার মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে। পড়াশোনায় বেশ আগ্রহী হয়েছে: মিতু রানীর মা।
মিতু রানীর বাবা নেই। তার মা দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আলোর পাঠশালায় কোনো খরচ লাগে না। সেই সঙ্গে বিদ্যালয় আসা যাওয়ার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় একটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে। সাইকেল পেয়ে মিতু ও তার মা দুজনেই খুব খুশি।
ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘সানিডেইল’-এর পক্ষ থেকে বাইসাইকেলগুলো দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ে ২৮টি সাইকেল প্রদান করেন। এই সাইকেলগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থীদের সাইকেলে করে যাতায়াত প্রসঙ্গে রামা পাড়া গ্রামের একজন ব্যক্তি শ্রী উপেন দাস বলেন, ‘এর আগে আমি কখনো মেয়েদের সাইকেল চালাতে দেখিনি। প্রথম আলো স্কুল হওয়ার পর দেখলাম মেয়েরা সাইকেল চালাচ্ছে। ছুটির পর যখন মেয়েরা এক সাথে দল বেঁধে সাইকেল চালিয়ে যায় তখন দেখতে খুব ভালো লাগে।’
মিতু রানীর মা বলেন, ‘সাইকেল পেয়ে আমি ও আমার মেয়ে খুব খুশি। আমার মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে। পড়াশোনায় বেশ আগ্রহী হয়েছে। স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য আমার মেয়ের আর সমস্যা হয় না। তাই গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার সকল শিক্ষক ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানাই।’
গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ আমাদের বিদ্যালয়টা অন্যদের থেকে একটু আলাদা। এখানে যাতায়াতের জন্য সাইকেল প্রদান করা হয়, মেয়েদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী (স্যানিটারি ন্যাপকিন) সরবরাহ করা হয়। দক্ষ শিক্ষক মণ্ডলী দ্বারা পাঠদান পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন পালনীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। ফলে আমাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনা অনেক বেশি। শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে এবং পাঠ গ্রহণ করে।’