মর্জিনা মারডি গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা থেকে ২০২৪ সালে জিপিএ ৩.৩ পেয়ে এসএসসি পাস করে। বর্তমানে সে নিয়ামতপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মর্জিনার বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার টিকরামপুর গ্রামে। মর্জিনার বাবার নাম ত্রিভান মারডি এবং মায়ের নাম চাঁনমনি কিস্কু। মর্জিনারা চার ভাই বোন। চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছোট। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ছোট একটা পরিবারে তার জন্ম। সাঁওতাল সমাজে এখনও শিক্ষার আলো পুরোপুরিভাবে পৌঁছায়নি এবং কুসংস্কারে জর্জরিত। কুসংস্কারের অন্ধকারাচ্ছন্নতা কাটিয়ে সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং ক্যারিয়ার হিসেবে ফুটবলকে বেছে নিয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রথম অংশগ্রহণ করে মর্জিনা। তখন থেকেই বিকশিত হতে শুরু করে তার প্রতিভা। আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা তারপর বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নীত হয় তার চমকপ্রদ ফুটবল খেলা। মাঝ মাঠে তার পায়ের জাদুতে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের বোকা বানিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করতে তার জুড়ি মেলা ভার। নিয়ামতপুর ফুটবল একাডেমি থেকে সে একাধিকবার উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রামবাসী তাকে নিয়ে মেতেছে বিজয় উল্লাসে। রাজশাহী বিভাগের হয়ে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট,নারী (অনূর্ধ্ব ১৭) - ২০২৫ ফুটবল টুর্নামেন্টে মর্জিনা মারডি অংশগ্রহণ করে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজশাহী বিভাগ। কিন্তু তার এ পথ চলা কখনো এত মসৃণ ছিল না। মর্জিনা এখন পড়াশোনার পাশাপাশি প্রমিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট, রেলগেট, রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
মর্জিনা বলে, ' ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। ফুটবল খেলতে আমার খুবই ভালো লাগে। আমি একদিন বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলে খেলতে চাই এটাই আমার স্বপ্ন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানচিত্র কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চাই। আমার খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রাজিত দাস স্যার, নিয়ামতপুর উপজেলা ফুটবল একাডেমির সিরাজুল ইসলাম স্যার ও রাজশাহীর জহির ইকবাল ভোলা স্যার। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই শ্রদ্ধেয় স্যারদের। গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রাজিত দাস বলেন, ' মর্জিনার ফুটবল প্রতিভা ঈশ্বর প্রদত্ত। ছোট থেকেই মর্জিনার ফুটবলের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। যেখানেই ফুটবল খেলা হতো মর্জিনা সেখানে ছুটে যেতো। বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত খেলা গুলোতে সে বরাবরই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হতো। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে একদিন সে অনেক বড় খেলোয়াড় হয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে এটা আমার বিশ্বাস।'