পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে নিজের খরচ নিজেই যোগায় সুরমিলা হাঁসদা

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরমিলা হাঁসদা।

কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের কাছে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে এটা তাদের করতেই হয়। কেননা সেই অর্থ দিয়ে পড়ালেখাসহ নিজ খরচ যোগাতে হয় তাদের। পাশাপাশি সেই অর্থের কিছু থাকলে তা সংসারে দিতে হয়। এভাবেই পড়ালেখার পাশাপাশি ধান লাগানো, জমি পরিচর্যা, ধান কাটা, পেয়ারা ও আম বাগানে কাজ করা, বিভিন্ন ফসলের সময় দিন মজুরের কাজসহ নানা কাজ করে অর্থ উপার্জন করে থাকে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরমিলা হাঁসদা। সেই উপার্জিত অর্থ নিজ ও ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার জন্য খাতা-কলম কেনা, নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার কাজে ব্যয় করে সে। এর বাইরেও কিছু অর্থ থাকলে তা সংসারের কাজে ব্যয় করে।

কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম বাবুডাইংয়ের শুকলাল হাঁসদা ও ফুলবতি মুর্মুর পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় সুরমিলা। তাই বাড়ির কাজের দায়িত্বও বেশি তার উপরে। তার ছোট দুই ভাই আদিত্য হাঁসদা ও আদিরণ হাঁসদা বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সুরমিলার বাবা অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তার উপার্জিত টাকায় সংসারের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সুরমিলাও যুক্ত হয়েছে কর্মে।

সুরমিলা শুধু পড়াশোনায় ভালো তা নয়। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কোল সাংস্কৃতিক দলের দলনেতাও সে। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে দলের অন্যরা নাচ-গান চর্চা করে থাকে। আলপনা আঁকতেও পটু সে। এছাড়া বিভিন্ন পালা-পর্বনে নিজেদের বাড়ির পাশাপাশি গ্রামের অন্যদের বাড়িও লেপে-পুছে আলপনা একে দেয় সে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর জানান, সুরমিলা হাঁসদা পড়ালেখাতে যেমন ভালো, তেমনি নানা গুণে গুণান্বিত। তার নেতৃত্বেই বিদ্যালয়ের বড় সাংস্কৃতিক দলটি পরিচালিত হয়। আলপনা আঁকতেও পটু সে। সে ও তার দল বিদ্যালয়ের মাটির দেয়াল ও শহীদ মিনারে আলপনার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে থাকে। সে শিক্ষকদের কথা শোনে। আমরা তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।