দুর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

মায়া খাতুন, প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নতুন চর জেগেছে। নাম তার খাসের চর। আব্দুস সালাম ঈদের দিন সকাল সকাল নামাজ শেষে, সেমাই খেয়ে বন্ধুদের নিয়ে সেই চরে বেড়াতে যাবেন। সে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহে আবস্থিত প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি আব্দুস সালামের ঈদ ভাবনা জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, ‘ঈদ মানে খুশি, আনন্দ। সেই আনন্দ বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে ভাগ করে না নিলে ঈদ ঠিকমত উদ্‌যাপন হয় না। ঈদের দিন আমার বন্ধু  শিমুল আসবে চর রসুলপুর থেকে। প্রথম আলো চরের শাহীন , বিপ্লব, ফহিমরাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। সবাই মিলে সকাল সকাল খাসের চরে যাবো, বিকালে খেলব ফুটবল। খেলা শেষে সবাই মিলে চটপটি খাবো। এবারের  ঈদ আমাদের এভাবেই কাটবে।’

প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার আরেক শিক্ষার্থী মায়া খাতুন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। ঈদের নতুন জামা কিনেছে সে। ঈদের দিন সহপাঠী ফাতেমা, এস্কেনা, জান্নাত, মারুফাকে নিয়ে বন্ধু আমেনার বাড়িতে ঘুরতে যাবে । আমেনার বাড়ি প্রথম আলো চর থেকে অনেক দূরে।  যেতে আসতে দুই ঘন্টা লাগবে। কীভাবে বন্ধুর বাড়িতে যাবে এখনো ঠিক করেনি মায়া। তবে ঈদের দিন নদীর ঘাটে সবাই মিলে ফুচকা খাবে এটা নিশ্চিত।

 উল্লেখ্য,  দুধকুমার, গঙ্গাধর আর ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগ রেখায় হঠাৎ জেগে ওঠে এক চর। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সেই চরে একে একে ঘর বাঁধে ষোলোটি পরিবার। সহায় সম্বলহীন সেই পরিবারগুলির প্রতিদিনের জীবন-যাপনে সব সময় পাশে ছিল দৈনিক সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’। ২০০৫ সালে চরবাসী ভালোবেসে ভূখণ্ডের নাম রাখে “প্রথম আলো চর’’। সময়ের পরিক্রমায় প্রথম আলো চরে পরিবারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সংখ্যাটি চার শ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় পরিবারগুলোর দাবিরমুখে, প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় ২০০৯ সালে চরে যাত্রা শুরু করে ‘প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা'।

আব্দুস সালাম, প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এদিকে মদনপুর চরের আবীর ঠিক করেছেন ঈদের দিন বন্ধুদের নিয়ে সন্দীপ ঘুরতে যাবেন। আবীর  মদনপুর আলোর পাঠশালার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে অবস্থিত। আবীর জানায় ‘ শুনেছি সন্দীপে আনেক বড় একটা টাওয়ার হয়েছে। সেই টাওয়ারে উঠলে নাকি আমাদের চর দেখা যায়। বন্ধু আলাউদ্দিন, ফারুক, শান্তকে নিয়ে সকাল সকাল নৌকাযোগ সন্দীপ যাবো আর বিকেলে এসে  খেলবো ক্রিকেট।’

মদনপুর আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিবি জয়নব ঈদের দিন বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে যাবেন। জয়নব বলেন, ‘ এবার ঈদে নতুন জামা কেনা হয়নি। এ নিয়ে আমার কোন মনোকষ্ট নেই। ঈদের দিন সহপাঠী ফারজানা, ফাতেমাকে নিয়ে বন্ধু বিবি সোনিয়ার বাড়িতে বেড়াতে যাবে। আর ঈদের দিনের সকালটা শুরু হবে মায়ের হাতের রান্না করা সেমাই খেয়ে। আমি সেমাই খেতে খুব পছন্দ করি। ’

 উল্লেখ্য, মদনপুর চরে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার লোকের বাস। চরটিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। ফলে চরে বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। প্রথম আলো ট্রাস্ট ২০১৫ সালে সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় ‘মদনপুর আলোর পাঠশালা’ প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে মদনপুর আলোর পাঠশালা ইউনিয়নটির একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়।