স্কুলে ভর্তি হয়ে মাসুরার জীবন পাল্টে গেছে

’স্কুলে ভর্তি হয়ে আমার জীবনটা পাল্টে গেছে। আমি ক্লাসে এবং বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করি। এই স্কুলের আনন্দময় পরিবেশ আমার মা হারানোর কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। আমি এই স্কুলে ভর্তি হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি যেন পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হতে পারি।’ এই কথাগুলো বলে গুড়িহারী-কামদেপুর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা. মাসুরা খাতুন।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট নওগাঁর গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আলোর পাঠশালা বন্ধ রয়েছে।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মো. নূর আলম বলেন, মোসা. মাসুরা খাতুন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একজন শিশু। মাসুরার বাবা মো. মজিবুল ইসলামও পুরোপুরি স্বাভাবিক সুস্থ নয়। মাসুরার একটি ছোট ভাই আছে। মাসুরার বয়স যখন ৫ বছর তখন তার মা পারিবারিক দ্বন্দ্বে মাসুরার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। মাসুরার বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। তাই তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়ে মাসুরার ফুপুর উপর। মাকে হারিয়ে মাসুরা একটা ধাক্কা খায়। তারপর মা হারানোর কষ্টে আস্তে আস্তে তার কথা বলার ইচ্ছা হারিয়ে যায়। সারা দিন চুপচাপ থাকে। পরে গুড়িহারী-কামদেপুর আলোর পাঠশালায় ভর্তি হয় মাসুরা। মাসুরার ফুফু মাসুরাকে বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করেন। শিক্ষকগণ মাসুরার সাথে অনেক বেশি কথা বলেন। তার সহপাঠীদেরও বলা হয়, তারা যেন মাসুরার সাথে বেশি করে কথা বলে, মিশে এবং তার সাথে ভাল ব্যবহার করে। শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সহপাঠীদের চেষ্টায় ধীরে ধীরে মাসুরার পরিবর্তন দেখা যায়।’

এখন মাসুরা আরও পাঁচ দশটা শিশুর মত সবার সঙ্গে কথা বলে। সবার সঙ্গে মিশে। সে আগের তুলনায় পড়াশোনাতেও অনেক উন্নতি করেছে। মাসুরা এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে।

মাসুরার ফুফু মোসা. তসলিমা বেগম বলেন, ’মাসুরার মা যখন চলে গেল তখন হামি খুব চিন্তাত পড়ে গেনু। এক হামি কেমন করে মানুষ করমু? কারও সঙ্গে কথা বলে না। কারও সঙ্গে খেলে না। খালি বসে থাকে আর কান্দে। এই স্কুলত পড়াহে ভালো হয়ে গ্যালো। আল্লাহ আলো পাঠশালা স্কুলোক ভালো করুক।’