মেহেদী হাসানের একটা গল্প রয়েছে

মেহেদী হাসান।

ভোলা জেলায় দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরের বাসিন্দা শফিক মাঝি। ছয় সন্তান নিয়ে শফিক মাঝির সংসার। সন্তানদের ভেতরে মেহেদী হাসান সবার ছোট। মেহেদী মদনপুরে আলোর পাঠশালার একজন সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ভোলা সরকারি কলেজে থেকে ব্যবসায় শাখায় এইচএসসি পরিক্ষার্থী। পাশাপাশি ভোলা সদরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইনে প্রশিক্ষন গ্রহন করে নিজে একটি ব্যাবসা পরিচালনা করছেন।

মেহেদী হাসানের একটা গল্প রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মদনপুরে আলোর পাঠশালার শিক্ষক আলী আজগর জানালেন , ‘স্কুল শেষে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আকতার হোসেন দেখলেন মেহেদী নৌকায় করে অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরছে। ঝুঁকিপূর্ণ নদীতে মাছ না ধরার জন্য বলেন আকতার হোসেন। একই সঙ্গে স্কুলে এসে তাঁকে লেখাপড়া করতে বলেন । পরদিন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক মেহেদীদের বাড়িতে যান।’

এ সময় মেহেদীর বাবা শফিক মাঝি বলেন, ‘পড়ালেহা করলে ট্যাকা কামাইতে অনেক সময় লাগে। তা ছাড়া পড়ালেহা অনেক খরচ, নদীতে মাছ ধরতে পারলেই ট্যাকা। যদিও আমি এই সব পোলাপাইনরে বুঝাইতে পারি না, অরা কামের ডরে স্কুলে জাইতে চায়।’ কথাগুলি শুনে মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘আসলে আপনার ধারণা ভুল। নদীতে মাছ ধরা অনেক কষ্টের কাজ এবং সব সময় নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। আর খরচের ব্যাপারে হয়তো আপনার ধারণা নেই। প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আমাদের স্কুলে কোনো ধরণের খরচ হয় না। এখানে সরকারিভাবে প্রদত্ত বিনা মূল্যে বই ছাড়াও বিনা বেতন, বিনা মূল্যে শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ড্রেস ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়ে থাকে। দুর্যোগকালীন সময়ে আর্থিক সাহায্য প্রদান ও শিক্ষা সফরের আয়োজন করে থাকে, যা আপনার সন্তানের পড়াশোনার সহায়ক।’

এসব শুনে শফিক মাঝি তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে রাজি হন এবং বলেন, ‘ স্যার আম্নে যেহেতু কইছেন পড়ালেহায় আম্নেগো স্কুলে খরচাপাতি নাই, তাই আম্নের আতেই আমার পোলাডারে দিলাম। ওর দায়িত্ব আম্নেগো।’

এরপর থেকে মেহেদী নদীতে মাছ ধরতে কম যেত। স্কুলের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি স্কুলের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক উত্তীর্ণ হন। ২০১৬ সালে অত্র বিদ্যালয় থেকে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। একইভাবে এসএসসি পরীক্ষায়ও ভালো ফল অর্জন করেন মেহেদী।এ বছর তিনি ভোলা সরকারি কলেজে থেকে ব্যবসায় শাখা থেকে এইচএসসি পরিক্ষা দেবেন।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট মদনপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।