ফুটবলার হিসেবে এলাকায় পরিচিত মর্জিনা মারডি

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মো. নূর আলম ফুটবল খেলার বিজয়ী দল হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করছেন।

মর্জিনা মারডি প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত ‘গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মর্জিনা মারডি গুড়িহারী শালবাড়ি গ্রামের সাঁওতাল পাড়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পরিবারে জন্ম। বাবা তিরভান মারডি ও মা চানমুনি কিস্কু। মর্জিনারা চার ভাই বোন। বড় একটি বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। মর্জিনার বাবার নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। মর্জিনার বাবা, মা ও বড় ভাই অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে, আবার অনেক সময় অন্যের বাড়িতে মাসিক চুক্তিতে কাজ করেই তাদের সংসার চালাতে হয়। মাঝে মধ্যে মর্জিনাকেও বাবা-মার কাজে সাহায্য করতে হয়। এত কষ্টের মধ্যেদিয়ে দিন কাটানোর পরও মর্জিনা চালিয়ে যাচ্ছে নিজের পড়ালেখা। এমনকি নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই প্রতিরোধ করেছে। মর্জিনা একজন নারী ফুটবলার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। মর্জিনা আলোর পাঠশালার নারী ফুটবল দলের সদস্য।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মো. নূর আলম শিক্ষার্থীদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা শেখান। বিদ্যালয়ে উদ্‌যাপিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দুই দলে বিভক্ত করে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। মর্জিনা মারডি নিজেকে ফুটবলার হিসাবে প্রমাণ করেছে। ২০১৯ সালের বিজয় দিবসে বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে মর্জিনা ফুটবল খেলে নিজেকে খেলোয়াড় হিসেবে মেলে ধরেন। মর্জিনার ফুটবল খেলা অনেকে নজর কেড়েছে। শুধু মর্জিনা নয় মর্জিনার সঙ্গে রুপালি মারডিসহ আলোর পাঠশালার ফুটবল দলের আরও ৭ জন খেলোয়াড় ২০২১ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার ফুটবল দল হয়ে নওগাঁ জেলাতে অংশগ্রহণ করে এবং ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। মর্জিনার বাবা তিরভান মারডি বলেন, ‘হামার বেটি ভালো বল খেলতে পারে।হেড মাস্টার বুলল আপনার বেটিকে নওগাঁ ফুটবল খেলতে নিয়ে যাওয়া হবে। হামি খেলতে পাঠানু। পরে শুননু হামার বেটি নাকি ভালোই বল খেলছে। এ কথা শুনে হামার খুব ভালো লাগিছে। আর হামার বেটিকে আরও পড়ামু।’

প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত ‘গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মর্জিনা মারডি।

মর্জিনার মা চানমুনি কিস্কু বলেন,‘গত বছর মনে করিছিনু মর্জিনার বিয়া দিমু। মর্জিনা বিয়া করবে না। বুলোছে লেখাপড়া করবে, আর ফুটবল খেলবে। এখন শুনেছি মর্জিনা ফুটবল ভালোই খেলোছে। আর মর্জিনার পড়াতে কোন পয়সাও খরচ হয় না। উল্টা স্কুলত থ্যাকেই মেলা উপহার পায়। চাল, ডাল, চিনি ,সেমাই, মশারি, পোশাক, করোনার সময় ত্রাণ আবার মর্জিনার স্কুলত যাওয়ার জন্য সাইকেল, আরো মেলাই কিছু।’

খেলাধুলার বিষয়ে মর্জিনা বলে, ‘যখন ক্লাস সিক্স ভর্তি হই, তখন দেখি স্কুলের বড় আপারা ফুটবল খেলছে। আমারও খেলার ইচ্ছে হয়। হেড স্যার আমাকে খেলার সুযোগ করে দেন এবং কিভাবে ভালো খেলা যায় তার কৌশল শেখান। আমি মনোযোগ সহকারে স্যারের কথা অনুসারে খেলা শুরু করি। করোনার জন্য প্রায় দেড় বছর খেলার অনুশীলন বন্ধ আছে। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে পড়ালেখার পাশাপাশি আরও ভালো ফুটবল খেলতে পারব।’

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।