চরের মাস্টার আব্দুল কাদের

প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের।

কুড়িগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনায় অবস্থিত প্রথম আলো চর। এই চরের সূচনা লগ্নে সেখানে কোন বিদ্যালয় ছিল না। শিশুদের শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। হাতে গোনা দু-একজন অভিভাবক তাদের সন্তানকে পড়াশোনার জন্য অন্য এলাকার বিদ্যালয়ে পাঠাতেন।

এই চরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের। সেখানে থেকেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। তিনি দেখেছেন, এখানে তার বন্ধুরা মাঠে গরু চড়ায়, নদীতে মাছ ধরে। এগুলো তার মনে ভীষণ নাড়া দিত। তিনি ভাবেন, পড়াশোনা করে এক সময় তিনি এই এলাকার শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন।

এক শিক্ষার্থীকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছন প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের

এরই মধ্যে আব্দুল কাদের কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে এলাকায় চলে আসেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পড়াশোনা করাতেন। মাঝে মধ্যে গ্রামের উঠোনে বাচ্চাদের জড়ো করে পড়াতেন।

পরে ২০১০ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট এই চরে আলোর পাঠশালা নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ২০১৬ সালে এই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল কাদের। ২০১৮ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যথাযথ খোঁজ খবর রাখেন। বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তৎক্ষণাৎ তার অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পাঠ বুঝিয়ে দেন এবং মূল্যায়ন করেন। বছরে তিন থেকে চার বার বাল্য বিয়ে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গ্রামে উঠোন বৈঠক করেন। এর ফলে এলাকায় বাল্য বিয়ের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।

এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ফজলার রহমান বলেন, আব্দুল কাদের মাস্টার আমাদের চরের মাস্টার। তিনি প্রতি বাড়ি গিয়ে শিশুদের খোঁজ খবর নেন। যার ফলে শিশুরা আজ পাঠশালামুখী হয়েছে । এখন তারা পড়াশোনায় ব্যাস্ত।

আব্দুল কাদের বলেন, শিক্ষকতা পেশা একটি মহৎ পেশা, সম্মানের পেশা। এ পেশায় যারা কাজ করেন তাঁরা জাতির কারিগর। প্রত্যন্ত,দুর্গম এই চরে সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে পেরে আমি ধন্য।