আলোর পাঠশালায় নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়
গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালাতে প্রতি বছর বিশেষ দিনে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী অভিভাবক ছাড়াও গ্রামের এবং দূর দূরান্ত থেকে আগত দর্শকেরাও অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন রকম মজার মজার খেলার আয়োজন করা হয়। যেমন গ্রামের বিবাহিত নারী-পুরুষদের রশি টানা, বয়স্কদের ফুটবল খেলা, হাঁড়ি ভাঙা, মোমবাতি দৌড়, যুবকদের দৌড় আর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম খেলা। বিদ্যালয়ে আগত সকলে মিলে আনন্দের সঙ্গে সারা দিন দিন কাটান। আবার সন্ধ্যা হলে শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যা দেখে মেতে থাকে ছোট বড় সকল দর্শকেরা।
করোনা মহামারির আগে আলোর পাঠশালার অনুষ্ঠান দেখে গ্রামের এক বৃদ্ধ বাছের আলী (৭০) বলেন,‘হামার লাতী সবুজ এই স্কুলত পড়ে। সবুজ বুলল দাদা আজকে স্কুলে গান বাজনা আর খেলাধুলা হবে। তুমি স্কুলত আসো। সকালে ধীরে ধীরে হাঁটে স্কুল আসনু। ছ্যাওয়ালেঘেরে খেলা দেখতে ভালোই লাগল। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীঘেরে মাস্টারেরা বিস্কুট, কেক, জুস খ্যাতে (খেতে) দিল। হামাকও এগুলা খ্যাতে দিল। বিকেলে আবার হামাক হাড়ি ভাঙা খেলতে দিল। আবার একটা প্রাইজও দিল মাস্টারেরা। মেলাদিন পর হামিও একটা প্রাইজ পানু। প্রাইজ পায়ে হামি খুব খুশি হছি।’
ওই একইদিনে, সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে আসা কামদেবপুর গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ‘এই স্কুলের অনুষ্ঠান দেখতে ভালোই লাগে। ছাত্র-ছাত্রীরা নাচ-গান, কবিতা আবৃতি, বিতর্ক ভালোই করতে পারে। কেমন করে সারা রাত কেটে যায় বুঝতেই পারি না। প্রতি বছর এই স্কুলের অনুষ্ঠান দেখার জন্য অপেক্ষা করি। স্কুলের অনুষ্ঠান দেখে আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। কারণ যুবক বয়সে আমিও যাত্রাপালার সদস্য ছিলাম, অনেক জায়গাতে অনেক যাত্রা করেছিলাম। এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরও ভালোই নাটিকা-যাত্রা করতে পারে।’
আলোর পাঠশালার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূর আলম বলেন, ‘খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাগুলো বিকশিত করা যায়। শিক্ষার্থীদের শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশেষ ভূমিকা রাখে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বিদ্যালয়ে প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। যাতে করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিভাগুলোর উন্মোচন ঘটাতে পারে। তবে করোনার কারণে গত দেড় বছর আয়োজন করা যায়নি এ অনুষ্ঠানগুলো। পরিস্থিতি ভালো আবার শুরু করার আশায় আছি আমরা।’
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট গুড়িহারি কামদেবপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।