আদর্শ শিক্ষক হতে চান মাহফুজা খাতুন
‘চরখিদিরপুর’ প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার অন্তর্গত। সেখানে ছিল না কোনো হাইস্কুল। যার ফলে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ছেলেরা মাঠে কাজ করত। মেয়েদের দেওয়া হতো বাল্য বিয়ে। লেখাপড়া ছিল ওই চরে বিলাসিতা। পরে সামিট গ্রুপের সহায়তায় রাজশাহী আলোর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করা হলে শিক্ষার্থীরা আবার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়।
রাজশাহী আলোর পাঠশালাসহ সারা দেশে ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সরকার বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করছে। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট স্কুলে বিনা মূল্যে পড়াসহ নানা ব্যবস্থা করেছে।
রাজশাহী আলোর পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজা খাতুন মুক্তি । পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। সে এখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। শিক্ষকের সহায়তায় মাহফুজা খাতুন মুক্তি শহরের একটি কলেজে ভর্তি হয়। প্রতিদিন সে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে কলেজে আসে। যা তার জন্য খুব কষ্টের । তবুও থেমে থাকেনি মাহফুজা খাতুন । পদ্মার উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে প্রতিনিয়ত কলেজ যেতে হয় তাকে। বর্তমানে করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়িতে থেকে অনলাইনে ক্লাস করছে মাহফুজা খাতুন ।
রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, ‘মাহফুজা খাতুন মুক্তি পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্কুলে না আসতে চাইলে তাকে স্কুলে আনার জন্য সে উদ্যোগ নিত। শিক্ষকদের সহযোগিতায় এবং তার নিজের প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। চর অঞ্চলে এই প্রথম মুক্তির ভালো ফলাফলে অবাক হয় পুরো এলাকাবাসী। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৬১ পেয়ে কলেজে পদার্পণ করে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া শেষ করে সে একজন আদর্শ শিক্ষক হবে।'
নদী ভাঙ্গনের কারনে রাজশাহী শহরের তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় রাজশাহী আলোর পাঠশালা স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, রাজশাহী আলোর পাঠশালা, রাজশাহী।