অপেক্ষায় ছিলাম আলোর পাঠশালাতে ভর্তি হওয়ার জন্য

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ফুয়াদ হাসান।

অনেকদিন থেকে অপেক্ষা করছিলাম আলোর পাঠশালাতে ভর্তি হওয়ার জন্য। আলোর পাঠশালার পিটি প্যারেড দেখতে অনেক ভালো লাগতো। মনে হতো আমিও কবে পিটি করতে পারব। প্রতিদিন সকালে স্কুলে চলে আসতাম পিটি প্যারেড দেখতে। আমার অনেক ভালো লাগতো। আবার স্কুল থেকে অনেক উপহার দিতে দেখতাম। কখনো কম্বল, কখনো ঈদের পোশাক, সাইকেল, মশারি, স্কুল ড্রেস আরও অনেক কিছু। বিশেষ করে ঈদের সময় স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ঈদের পোশাক দিতে দেখে মনে হয়েছিল আমি কখন এই স্কুলে ভর্তি হব। এবার সত্যি সত্যি আমিও দুই বার ঈদ উপহার পেলাম।’এভাবে বললেন, গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ফুয়াদ হাসান।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মো.নূর আলম বলেন, ‘২০১৪ সালে তার বাবা হৃদরোগে মারা যান। ফুয়াদের বাবা মারা যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। তার বড় ভাই ফয়সালের (বর্তমানে আলোর পাঠশালার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী) বয়স ছিল ১০ বছর। ফুয়াদের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে সংসার পরিচালনা করেন। ফুয়াদের মা চিন্তায় পড়ে যান কীভাবে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবেন, আর সংসারের খরচ বহন করবেন। ফুয়াদের বাবার জমি পরিমাণও খুবই অল্প। আয়ের উৎস বলতে ছিল একটি পানির সেচ পাম্প। যা দিয়ে কোন রকম করে বছরে কিছু পরিমাণ উপার্জন হত। ২০১৭ সালের গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার এক কমিউনিটি মিটিংয়ে ফুয়াদের মা উপস্থিত হন। বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন ও বিদ্যালয় সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানতে পেয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন নিজের দুই ছেলেকে আলোর পাঠশালাতে ভর্তি করানোর। অবশেষে ছেলেদের প্রাথমিক শেষ করতেই আলোর পাঠশালাতে ভর্তি করে দেন।’

ফুয়াদের মা মোসা. সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি হতাশায় ভুগছিলাম। কিভাবে আমার দুটো সন্তানকে মানুষ করব, তাদের পড়ালেখার খরচ বহন করব। আলোর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর একদিন একজন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আলোর পাঠশালাতে পড়াতে কোন খরচ দিতে হয় না। একদিন আলোর পাঠশালার কমিউনিটি মিটিং এ আমি উপস্থিত হলাম। আর জানতে পারলাম সত্যি আলোর পাঠশালাতে পড়ালে কোন খরচ দিতে হয় না বরং স্কুল থেকে পাওয়া যায় অনেক উপহার। দুই ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করানোর পর তাদের পড়ালেখা করার জন্য আমার কোন খরচ দিতে হয়নি। স্কুল থেকে অনেক বার অনেক কিছু উপহার পেয়েছি। এখন আমি পুরোপুরি স্বস্তিতে আছি যে, আলোর পাঠশালার জন্য আমার দুই ছেলেকে অন্তত এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করাতে পারব।’

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট গুড়িহারি কামদেবপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।