অ্যাসিডবিরোধী সংলাপ
অ্যাসিড–সন্ত্রাস নির্মূলে করণীয়
অ্যাসিড–সন্ত্রাস একসময় দেশের আলোচিত একটি সমস্যা ছিল। সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যম ও সরকারের উদ্যোগে সেই সমস্যা অনেকটা কমে আসে। তবে সম্প্রতি অ্যাসিড–সন্ত্রাস আবার বেড়েছে। এ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আগের মতো প্রচার–প্রচারণা নেই। সরকারি পর্যায়ে সেভাবে তদারকিও হয় না। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গত ১৯ আগস্ট শনিবার ‘অ্যাসিডবিরোধী সংলাপ: অ্যাসিড–সন্ত্রাস নির্মূলে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা উঠে এসেছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভার অতিথি
ডা. সামন্ত লাল সেন
প্রধান সমন্বয়ক, শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার
বিভাগীয় প্রধান, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
আমেনা বেগম
বিপিএম, ডিআইজি (প্রোটেকশন), এসবি, বাংলাদেশ পুলিশ।
ডা. আশিকুর রহমান
সহকারী রেজিস্ট্রার, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন
নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন।
রেক্সোনা ইসলাম
অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর।
কানিজ আলমাস খান
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেড।
জয়শ্রী সরকার
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি।
সেলিনা আক্তার
সিনিয়র স্টাফ ল’ইয়ার, আইন ও
সালিশ কেন্দ্র।
অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট।
মনিকা হালদার
ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা, প্রথম আলো ট্রাস্টের অ্যাসিডদগ্ধ সহায়ক তহবিল থেকে সহায়তাপ্রাপ্ত।
জাহিদা ইস্পাহানী
ট্রাস্টি, প্রথম আলো ট্রাস্ট।
গওহার নঈম ওয়ারা
লেখক ও গবেষক।
মতিউর রহমান
সম্পাদক, প্রথম আলো।
আনিসুল হক
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক।
মাহবুবা সুলতানা
সমন্বয়ক, প্রথম আলো ট্রাস্ট
আনিসুল হক
সংলাপের শুরুতে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক অ্যাসিডদগ্ধের ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০২ সালে অ্যাসিডদগ্ধের সংখ্যা ছিল ৪৯৬, যা পরে সামাজিক সংগঠন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং সরকারের আইন প্রণয়নের ফলে অনেকটা কমে যায়। ২০১৮ সালে অ্যাসিডদগ্ধের সংখ্যা ছিল ২২। ২০২২ সালে তা ২৯ হয়; অর্থাৎ অ্যাসিড–সন্ত্রাস আবার বাড়ছে।
ডা. সামন্ত লাল সেন
আমি ১৯৮৬ সাল থেকে অ্যাসিডদগ্ধ মানুষদের নিয়ে কাজ করছি। আগে এসব ভুক্তভোগীর পাশে গর্ভধারিণী মা ছাড়া কেউ থাকতেন না। এখন চিকিৎসার সুযোগ হয়েছে, অনেক সামাজিক সংগঠন তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন, প্রথম আলো ট্রাস্ট, সরকারি–বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান অ্যাসিডদগ্ধ মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে ভুক্তভোগীরা বাইরে আসতে পারছেন; কিছু ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বার্নে একটা কথা আছে, প্রিভেনশন ইজ দ্য বেস্ট ট্রিটমেন্ট অব বার্ন। আমি সব সময় বলে আসছি, বার্নের বিরুদ্ধে লড়তে হলে প্রথমে আমাদের সচেতন হতে হবে। অ্যাসিড বার্ন বেড়ে গেছে, কথাটি সত্যি। এর মূল কারণ হচ্ছে, অ্যাসিড–সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, অ্যাসিডের সহজলভ্যতা আমরা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি; তবে কখনো অ্যাসিড–সন্ত্রাস কমবে না। দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, তথা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে একত্র করে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের ইনস্টিটিউট থেকে সরকারকে জাতীয়ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি কমিটি করার প্রস্তাব করেছি। অ্যাসিডের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইউটিউব, মোবাইলের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠানোসহ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম আমরা ব্যবহার করতে পারি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি প্রতিজ্ঞা করেছি, বাংলাদেশে যেন বিনা চিকিৎসায় একজন পোড়া রোগীও মারা না যান। বর্তমানে সারা দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি করে বার্ন ইউনিট খোলা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানাই এ রকম একটি আয়োজনের জন্য।
মতিউর রহমান
আমি শুরুতেই কিঞ্চিৎ আবেগাপ্লুত হয়ে বলি, ২০০০ সালে প্রথম আলোর কর্মীদের এক দিনের বেতন দিয়ে অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে ডা. সামন্ত লাল সেন রয়েছেন। বাংলাদেশের অ্যাসিড আন্দোলন সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ডা. সামন্ত লাল সেনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ২০০২ সালের ৮ মার্চ আমরা অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি বড় জমায়েত করেছিলাম। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক আমাদের সঙ্গে ছিল। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদও সেদিন উপস্থিত ছিলেন। আপনাদের আশ্বস্ত করছি, অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবার জোরালোভাবে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা প্রথম আলোর সব মাধ্যমে প্রচার–প্রচারণা আরও বৃদ্ধি করব। ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিলের উদ্যোগে সামনের দিনে সমন্বিতভাবে কাজ করব। অ্যাসিড ব্যবসা লাইসেন্স করেই করার কথা। কিন্তু এটি ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটি দেখার জন্য জেলা–উপজেলা পর্যায়ে তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের অ্যাসিড আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জেলা–উপজেলা পর্যায়ে তদারকির দাবি তুলতে হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কাছেও বিষয়গুলো উত্থাপন করতে হবে।
রেক্সোনা ইসলাম
আমি বর্তমানে অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনে কাজ করছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে আমি জেনেছি, অ্যাসিড–সন্ত্রাসীদের সঠিক বিচার হয় না। অ্যাসিড নিক্ষেপের কারণে যেসব মামলা হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখেন, সন্ত্রাসীদের নিম্ন আদালতে হয়তো শাস্তি হয়েছে, কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিচার হলেও অ্যাসিড ভিকটিমরা সেই বিচারে সন্তুষ্ট নন। আমি মনে করি, অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার–প্রচারণা কমে গেছে। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার–প্রচারণা বাড়াতে হবে।
সেলিনা আক্তার
যাঁরা অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, তাঁরা যদি সঠিক বিচার পান; তবু তাঁদের মনের ক্ষত কখনো লাঘব হয় না। তারপরও আমরা দেখছি, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫০ জন আসামি খালাস পেয়েছেন। আমি ১৯৯৯ সাল থেকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে কাজ করছি। সেই সময় অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, প্রথম আলো আমরা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করেছি। প্রতিদিনই অ্যাসিড–সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটত। পরবর্তী সময়ে ২০০২ সালে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ও অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন নামে দুটি আইন পাস হয়। আইন পাসের ফলে সে সময় কিন্তু অ্যাসিড–সন্ত্রাস কমে আসে। কিন্তু প্রতিবেদন থেকে আমরা জানলাম, এখন আবার অ্যাসিড–সন্ত্রাস বাড়ছে। আমি মনে করি, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত অনেকগুলো কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। অ্যাসিড–সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কমিটিগুলো সচল করতে হবে। পাশাপাশি অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রচার–প্রচারণা বাড়াতে হবে। আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। অ্যাসিড ভিকটিমদের নিয়ে জাতীয় পরিসরে নিয়মিত কাউন্সিল হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
মনিকা হালদার
২০০১ সালে আমি অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হই। সে সময় গ্রামের মানুষ বুঝতেই পারেনি আমার কী হয়েছে। এখন মানুষ জানে, কেউ অ্যাসিডে দগ্ধ হলে প্রচুর পানি ঢালতে হবে, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। পুড়ে গেছে, জ্বলছে, এ জন্য আমার দগ্ধ জায়গায় নারকেল তেল দেওয়া হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। প্রথম আলোর সাহায্য–সহযোগিতায় আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন অ্যাসিডে দগ্ধ হই। সে সময় থেকে পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে প্রথম আলো। আমার সঙ্গে আমার মা অ্যাসিডদগ্ধ হন। তাঁর চিকিৎসার খরচও প্রথম আলো বহন করেছে। আমি মনে করি, পুলিশ প্রশাসন অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হলে সুফল মিলবে।
জয়শ্রী সরকার
আজ সকালে পাবনা থেকে আমাদের এক কর্মী ফোনে জানালেন, সাক্ষীর অভাবে গত সপ্তাহে একটি অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালতে সাক্ষী না আসায় আসামি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, অ্যাসিড–সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সাক্ষীদের আদালতে আনা যাচ্ছে না। সাক্ষী না আসার কারণে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সাক্ষী কেন আসছেন না, তিনি কি ভয় পাচ্ছেন? অর্থের লোভে পড়ে সাক্ষী দিচ্ছেন না? কিংবা সাক্ষীদের কেউ হুমকি দিচ্ছে, এ বিষয়গুলোতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আবার অ্যাসিড–সন্ত্রাস কমে যাচ্ছে, এ রকম একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এই কমে যাওয়া মানে কমে যাওয়া নয়। কমে যাচ্ছে বলে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার–প্রচারণা আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। বিপরীত দিকে অ্যাসিড–সন্ত্রাস বেড়ে যাচ্ছে। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার প্রান্তিক মানুষেরা আইনের সুবিধাপ্রাপ্তিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েন, এটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
গওহার নঈম ওয়ারা
বর্তমানে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখছি, তাতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারীর পাশাপাশি পুরুষ এবং শিশুরাও অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অ্যাসিড বর্তমানে একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিরোধের জেরে নারী–পুরুষনির্বিশেষে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এটি বর্তমানে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের একটি ভয়ংকর দিক। এই সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, অ্যাসিড–সন্ত্রাসের পরিধি বেড়েছে। আলোচকেরা বললেন, অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, কিন্তু সাক্ষীর অভাবে আসামিরা ছাড়া পাচ্ছেন। দেশব্যাপী সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হতে পারে। এতে সাক্ষী না আসার কারণ, মামলাগুলোর ত্রুটিবিচ্যুতি যাচাই করা যাবে। বই প্রকাশিত হলে পুলিশ প্রশাসনও এটি থেকে একটি দিশা পাবে বলে আমি মনে করি। দ্রুত বিচারের আওতায় অ্যাসিড–সন্ত্রাসের সব মামলা আনা যায় কি না, সেটিও আমরা ভাবতে পারি। এ কাজগুলো আমাদের দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।
ডা. আশিকুর রহমান
অ্যাসিড বার্ন ও কেমিক্যাল বার্ন হওয়ার কারণে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। আগুন লেগে পুড়ে গেলে কিংবা গরম পানিতে পুড়লে যতক্ষণ সংস্পর্শে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কিন্তু অ্যাসিড বার্ন ও কেমিক্যাল বার্ন হওয়ার করণে পুড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া দুই–তিন–চার দিন ধরে চলতে থাকে। তাই অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে পুড়ে যাওয়া অল্প মনে হলেও তিন–চার দিন পর দেখা যায়, গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আবার অ্যাসিড সাধারণত দৃষ্টিগ্রাহ্য—মুখ, হাত, পা—এসব জায়গা লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনসংশয়ের আশঙ্কা থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করেছি, অ্যাসিডে শুধু নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন না; পুরুষ ও শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যাসিড সহিংসতা শুধু নারীর প্রতি সহিংসতা নয়, এটি বর্তমানে মানুষের প্রতি সহিংসতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেকটি বিষয়, বার্নের চিকিৎসা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি, ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একটি ফান্ড গঠন করা প্রয়োজন। আমি সাত বছর ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যুক্ত আছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বর্তমানে গাড়ির ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড নিয়ে ছুড়ে মারা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। এদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
কানিজ আলমাস খান
বাংলাদেশে বিশাল সংখ্যায় অ্যাসিড সারভাইভারস রয়েছেন, এটি আমি প্রথম জানতে পারি প্রথম আলোর মাধ্যমে। ২০০৬–০৭ সালের দিকে আমি এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করি। সেই সময়ে জেলা পর্যায়ে গিয়ে দেখেছি, সংখ্যাটি অল্প নয়, প্রতি জেলাতে ৮–১০টি করে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। আমি ২০০৮ থেকে অ্যাসিড সারভাইভারসদের বিউটি পেশায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলাম। আমার ভেতরে একটা ভয় ছিল—একজন মানুষের সারা জীবনের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, আমি তাঁকে বিউটি পেশায় আসার কথা কীভাবে বলব। কিন্তু যখন জেলায় জেলায় গিয়েছি, তখন দেখেছি, অনেকে বিউটি পেশায় আসতে চান। এখনো আমার সঙ্গে অনেক অ্যাসিড সারভাইভারস আছেন। কাজ করছেন। অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন, বিউটি পেশায় ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রথম আলো শুরু থেকে অ্যাসিডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। প্রথম আলো আনেককে পুনর্বাসিত করেছে। প্রথম আলোর ভূমিকার কারণে আমি মনে করি, অ্যাসিডবিরোধী আইন পাস হয়েছে। অ্যাসিড–সন্ত্রাসও অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু এখন আবার অ্যাসিড–সন্ত্রাসের খবর আমরা পাচ্ছি। আমার মনে হয়, বর্তমানে প্রচার–প্রচারণায় একটু ভাটা পড়েছে। তাই আবার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অ্যাসিড–সন্ত্রাস শূন্যের কোঠায় আনার জন্য প্রথম আলোর যেকোনো উদ্যোগে আগে পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।
সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন
২০০২ সালে ৪৯৬ জন অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হন। এটি কমে ২০১৮ সালে ১৭ থেকে ১৮ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সাফল্যের দাবিদার কিন্তু এককভাবে কেউ নয়। সরকার, এনজিও, মিডিয়া, চিকিৎসক, শিক্ষক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ সাফল্য এসেছে। কিন্তু বর্তমানে কী ঘটছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা যদি বলি, দু–তিন মাস অন্তর অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই সভায় মন্ত্রী, বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সচিবদের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আমার জানামতে, গত তিন বছরে এ ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, এনজিও প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সমন্বয়ে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের হালচাল বিষয়ে প্রতি দুই মাসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা যদি যাই কিংবা অনুরোধ করি, তাহলে জেলা পর্যায়ে সভার আয়োজন করা হয়। এর বাইরে কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয় না। বর্তমানে অ্যাসিড সহজপ্রাপ্যতার কারণ হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কথা বলা হচ্ছে। এটি কিন্তু জেলা প্রশাসনের পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু এই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের মামলাগুলো তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং সেল রয়েছে। কিন্তু এই মনিটরিং সেলের বর্তমান অবস্থা কী, এ বিষয়ে আমি সঠিক তথ্য জানি না। এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এ জন্য প্রথম আলোকে আমরা ধন্যাবাদ জানাই। এ ধরনের সভা প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় অ্যাসিড–সন্ত্রাসের ঘটনা বেড়েছে। মানুষকে জানানোর জন্য সেখানে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এ রকম সভা আয়োজিত হতে পারে।
আরেকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে, অ্যাসিড মামলায় সাক্ষী হাজির হচ্ছেন না। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আজ থেকে ২০ বছর আগে যেসব চিকিৎসক আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। ফলে তাঁরা মামলায় সাক্ষী দিতে পারছেন না। আরেকটি বিষয়, আজ থেকে ২০ বছর আগে অ্যাসিড মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। একজন পোড়া রোগীর জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা বর্তমান সময়ের বিচারে হাস্যকর নয়! এ বিষয়ে আমাদের করণীয় রয়েছে।
আরেকটি বিষয়ে আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন পাঁচ বছর ধরে একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থসংকট। আমাদের দুটি জিনিস প্রয়োজন—এক. আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা প্রয়োজন; দুই. আমাদের অন্তত ২০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী ফান্ড দরকার। এই অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলবে। প্রতিবছর অন্তত ৬০০ জন অ্যাসিড সারভাইভারস আমাদের ফোন করেন। অনেকে ফোন করে বলেন, ঘরে খাবার নেই। অর্থসংকটের কারণে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না।
অধ্যাপক মোহিত কামাল
প্রথম আলোর সঙ্গে কাজের সূত্র ধরে প্রথম থেকেই আমি সারা দেশ ঘুরেছি। তখন আমি জেলা–উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এ রকম বড় বড় ব্যানার ও সাইনবোর্ড দেখেছি। কিন্তু বর্তমানে এ রকম ব্যানার–বিলবোর্ড আর চোখে পড়ে না। আমার মনে হয়, গ্রামগঞ্জে এখন কেউ জানেন না, অ্যাসিড নিক্ষেপ করলে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, ব্যানার–সাইনবোর্ডের মাধ্যমে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার–প্রচারণা বেগবান করতে হবে। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। আরেকটি বিষয়, অ্যাসিড–সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলার রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটি কিন্তু খুবই খারাপ দিক। মামলা চলতেই থাকছে, কিন্তু সাক্ষীর অভাবে রায় বাস্তবায়িত করা হচ্ছে না। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার
আজকের সংলাপের আয়োজক প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ। অ্যাসিড বার্নের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাকে অনেক মামলায় সাক্ষ্য দিতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে। সম্প্রতি অ্যাসিডের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আমি মানিকগঞ্জে তিনবার গিয়েছি। একবার সাক্ষ্য দিতে গেলাম, বিবাদীপক্ষ অনুপস্থিত। আমাকে এখনো সাক্ষ্য দিতে হচ্ছে। আজকের সংলাপে অ্যাসিডের সহজপ্রাপ্যতার কথা আলোচিত হয়েছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে দেশব্যাপী অ্যাসিড সহজলভ্য হয়েছে। প্রথমত, অ্যাসিডের সহজপ্রাপ্যতা রোধ করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, অ্যাসিডের মামলার রায় কার্যকর হচ্ছে না। মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, কিন্তু রায় কার্যকর হচ্ছে না। রায় দ্রুত কীভাবে কার্যকর হয়, তার উপায় বের করতে হবে। এখন শুধু নারীরা নন, পুরুষেরাও অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জমি নিয়ে বিরোধ কিংবা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষ অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেলে প্রতি মাসে অন্তত একজন অ্যাসিড সারভাইভারসকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে । এর মাধ্যমে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের কারণে যাঁদের হাত, পা, গলা ও মুখ বিকৃত হয়েছে; তাঁদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে যুক্ত করে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আমেনা বেগম
প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ। এখানে আলোচিত হয়েছে অ্যাসিডে ১ হাজার ১৯৪টি মামলার মধ্যে ১৪টিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্যকর হয়নি। আমি অনেক সময় দেখেছি, আসামিপক্ষের উকিল নিজেই চান না নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাক্ষ্য নেওয়া হোক। আইনজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, অনেক আইনজীবী চান, মামলা দীর্ঘ সময় ধরে চলুক। অ্যাসিড মামলার দীর্ঘসূত্রতার এটি একটি কারণ বলে আমি মনে করি। এখান থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, প্রথম আলো অ্যাসিডের কিছু মামলা ফলোআপ করতে পারে। কারণ অনুসন্ধান করতে পারে অ্যাসিডের মামলাগুলো কেন গতি পাচ্ছে না। আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই, আমার এক সহকর্মী অনলাইনে এক লিটার অ্যাসিড অর্ডার করেছেন, তাঁর বাসায় কিন্তু অ্যাসিড দিয়ে গেছে। অ্যাসিড অনলাইনে বিক্রি—এ বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি। এই যে পরিবর্তিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, এটি নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে অ্যাসিডের মামলা হয়েছে ১৬টি, ২০২১ সালে ১২টি, ২০২২ সালে অ্যাসিডের মামলা হয়েছে ১১টি আর ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে। আরেকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে, বর্তমানে নারী–পুরুষনির্বিশেষে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে অ্যাসিড একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে অ্যাসিড–সন্ত্রাসে ব্যাটারির অ্যাসিড ব্যবহৃত হচ্ছে।
জাহিদা ইস্পাহানী
এ সংলাপে ভালো ভালো পরামর্শ এসেছে। নিজ নিজ জায়গা থেকে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবার দায়িত্ব রয়েছে। তা আমাদের পালন করতে হবে। ভুক্তভোগীদের শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি আর্থিক প্রয়োজন ও মানসিক শক্তির মতো বিষয়গুলোতে সহযোগিতা প্রয়োজন। বাসা থেকেই অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অ্যাসিড সারভাইভারসদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন। আমি বলব, সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আমি আমার হাসপাতালে অনেক অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার রোগীকে দেখেছি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে অ্যাসিড–সন্ত্রাস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারব।
মাহবুবা সুলতানা
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৩৭ জন অ্যাসিডদগ্ধ হয়েছেন। ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৪৯৬ জন দগ্ধ হন। ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১ হাজার ৯৫০ জন খালাস পেয়েছেন। গত ১৯ বছরে ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। তবে একটিও কার্যকর হয়নি। প্রথম আলো ট্রাস্ট প্রায় ৪৫০ জন অ্যাসিডদগ্ধ নারীকে সহায়তা দিয়েছে।