অ্যাসিড সন্ত্রাস ও বর্তমান বাস্তবতা

প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে গত ১৯ আগস্ট ‘অ্যাসিডবিরোধী সংলাপ: অ্যাসিড–সন্ত্রাস নির্মূলে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়।

অ্যাসিড–সহিংসতা বৃদ্ধির হার আগের অবস্থায় না পৌঁছালেও নিরুদ্বিগ্ন থাকার সুযোগ নেই। এটি এমন ভয়াবহ অপরাধ যে এর শিকার মানুষগুলো প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকি সময়টা দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের কাছেও তাঁরা বোঝা হয়ে পড়েন।

গত ১৬ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় গৃহবধূর শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ওই গৃহবধূর নাম সাদিয়া আক্তার (২০)। তিনি বর্তমানে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত সুমন শিকদার (২৬) স্পিডবোটের চালক। চার বছর আগে শিবচর উপজেলার মাদবরচরের সিরাজ শিকদারের ছেলে সুমন শিকদারের সঙ্গে লিটু হাওলাদারের মেয়ে সাদিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। তাঁদের এক কন্যাসন্তানও আছে। পারিবারিক কলহের জেরে সম্প্রতি তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

এছাড়া গত ২৩ জুন রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ও গত ১০ এপ্রিল মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এই প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘অ্যাসিডবিরোধী সংলাপ: অ্যাসিড–সন্ত্রাস নির্মূলে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আলো ট্রাস্ট এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে অংশ নেয়া আলোচকেরা বলেন, দুর্বল নজরদারি ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারার কারণে অ্যাসিড–সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন অ্যাসিড সন্ত্রাসীরও এখন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। অ্যাসিড–সহিংসতা রোধে সরকার যে আইন করেছে, তা কি অকার্যকর হয়ে পড়েছে? যদি না হয়ে থাকে, অ্যাসিড–সহিংসতা বৃদ্ধির কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। অ্যাসিড–সহিংসতা কমে গেছে, এ ধারণা পোষণ করে চুপচাপ বসে থাকা কিংবা আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।

অ্যাসিড–সহিংসতার মতো ভয়ংকর অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কোথায় কী সমস্যা আছে, সেটা চিহ্নিত করে প্রতিকার করতে হবে। অ্যাসিড কেনাবেচার ক্ষেত্রে আইনে যেসব শর্ত আছে, সেগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।

অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনেক সময়ই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যান। অ্যাসিড–সহিংসতা তখনই কমবে, যখন প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।

উল্লেখ্য, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্যমতে, ২০২২ সালে অ্যাসিড–সহিংসতার ১৮টি ঘটনায় ২৯ জন দগ্ধ হন।২০২৩ সালেও বেশ কয়েকটি অ্যাসিড সন্ত্রাসের খবর পত্র–পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।