দমে যাননি অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার সানজিদা

অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার নারী।
প্রতীকী ছবি

প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাটোরের মেয়ে সানজিদা খাতুন। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ মাহিম নামের এক দুর্বৃত্ত অ্যাসিড ছুড়ে মারে সানজিদার মুখে। নাটোর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। অবস্থার অবনতি হলে সেই রাতেই তাঁকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনতে হয়। সেই থেকে শুরু হয় সানজিদার এক অন্য রকম যুদ্ধ। মুখের ডান পাশ আর ডান চোখের কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাই ধরেই নিয়েছিল আর কোনোদিন ডান চোখে দেখতে পাবে না সানজিদা। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একই সঙ্গে চলতে থাকে সানজিদার চিকিৎসা।

পরে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল তাঁর চোখের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে সেখানেই তাঁর চোখের চিকিৎসা চলছে। সবার মনোযোগ সানজিদার চিকিৎসায় আর এদিকে সানজিদা তখনো তাঁর পুড়ে যাওয়া মুখের চেহারা দেখেনি। এদিকে শেষ হয়ে গেছে এইচএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া মেয়েটা পরীক্ষাই দিতে পারল না। যেদিন তাঁর পুড়ে যাওয়া মুখ আয়নায় দেখল, সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন সানজিদা।

আর একটি মুখও যেন অ্যাসিডে ঝলসে না যায়।

যেদিন সানজিদা জানল সে আর পরীক্ষা দিতে পারছে না, সেদিন অঝোরে কেঁদেছেন। কাঁদলেও হাল ছাড়েননি তিনি। ২০২২ সালের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন, নাটোর থেকে ঢাকায় এসে নিয়মিত মুখ আর চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন। রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে মানসিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণও হয়েছেন।

দুর্ঘটনার পর থেকেই সানজিদার পাশে ছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট। ২১ নভেম্বর ২০২১ এর দুর্ঘটনার দুই দিন পরই প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকায় নাটোর বন্ধুসভা মানববন্ধনের আয়োজন করে। গ্রেপ্তার হয়ে দুর্বৃত্ত মাহিম যায় জেলে। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং পরবর্তীতে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও সানজিদার চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় বিনা মূল্যে। সানজিদার খবর পত্রিকার পাতায় দেখে তাঁর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন লেখক রাহিতুল ইসলাম। বরাবরই লেখক তাঁর সব বইয়ের প্রথম রয়্যালটির অর্থ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ব্যয় করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’ থেকে প্রাপ্ত প্রথম রয়্যালটি ৫০ হাজার টাকা লেখক প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। অনুদানের অর্থ থেকে ৩৫ হাজার টাকার চিকিৎসা সহায়তা পান সানজিদা আক্তার। তিনি তাঁর প্রথম আলো ট্রাস্টের মাধ্যমে লেখকের সেই সহায়তায় রাজশাহীতে থেকে সানজিদা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছেন।

২০২২-২০২৩ সেশনে নবাব সিরাজ উদ্-দৌলা সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক ভর্তি হয়েছেন।তাঁর ইচ্ছা অর্থনীতি বিষয়ে পড়বেন, চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন। সানজিদা বলেন, ‘পরিবারের বড় মেয়ে আমি, পড়াশোনা শেষ করে কিছু একটা করতেই হবে। পরিবারের পাশে থাকতে হবে। আমি আমার সধ্যমতো চেষ্টা করব, হার মানব না।’