‘অ্যাসিড বিরোধী সংলাপ প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন’

অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন।

অ্যাসিড–সন্ত্রাস একসময় দেশের আলোচিত একটি সমস্যা ছিল। সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যম ও সরকারের উদ্যোগে সেই সমস্যা অনেকটা কমে আসে। তবে সম্প্রতি অ্যাসিড–সন্ত্রাস আবার বেড়েছে। এ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আগের মতো প্রচার–প্রচারণা নেই। সরকারি পর্যায়ে সেভাবে তদারকিও হয় না। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ১৯ আগস্ট ২০২৩ ‘অ্যাসিডবিরোধী সংলাপ: অ্যাসিড–সন্ত্রাস নির্মূলে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা উঠে এসেছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।

অ্যাসিডবিরোধী সংলাপে অংশ নিয়ে অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০০২ সালে ৪৯৬ জন অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হন। এটি কমে ২০১৮ সালে ১৭ থেকে ১৮ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সাফল্যের দাবিদার কিন্তু এককভাবে কেউ নয়। সরকার, এনজিও, মিডিয়া, চিকিৎসক, শিক্ষক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ সাফল্য এসেছে। কিন্তু বর্তমানে কী ঘটছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা যদি বলি, দু–তিন মাস অন্তর অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই সভায় মন্ত্রী, বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সচিবদের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আমার জানামতে, গত তিন বছরে এ ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, এনজিও প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সমন্বয়ে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের হালচাল বিষয়ে প্রতি দুই মাসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা যদি যাই কিংবা অনুরোধ করি, তাহলে জেলা পর্যায়ে সভার আয়োজন করা হয়। এর বাইরে কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয় না। বর্তমানে অ্যাসিড সহজপ্রাপ্যতার কারণ হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কথা বলা হচ্ছে। এটি কিন্তু জেলা প্রশাসনের পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু এই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের মামলাগুলো তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং সেল রয়েছে। কিন্তু এই মনিটরিং সেলের বর্তমান অবস্থা কী, এ বিষয়ে আমি সঠিক তথ্য জানি না। এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এ জন্য প্রথম আলোকে আমরা ধন্যাবাদ জানাই। অ্যাসিড বিরোধী সংলাপ প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় অ্যাসিড–সন্ত্রাসের ঘটনা বেড়েছে। মানুষকে জানানোর জন্য সেখানে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এ রকম সভা আয়োজিত হতে পারে। 

আরেকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে, অ্যাসিড মামলায় সাক্ষী হাজির হচ্ছেন না। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আজ থেকে ২০ বছর আগে যেসব চিকিৎসক আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। ফলে তাঁরা মামলায় সাক্ষী দিতে পারছেন না। আরেকটি বিষয়, আজ থেকে ২০ বছর আগে অ্যাসিড মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। একজন পোড়া রোগীর জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা বর্তমান সময়ের বিচারে হাস্যকর নয়! এ বিষয়ে আমাদের করণীয় রয়েছে।

আরেকটি বিষয়ে আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন পাঁচ বছর ধরে একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থসংকট। আমাদের দুটি জিনিস প্রয়োজন—এক. আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা প্রয়োজন; দুই. আমাদের অন্তত ২০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী ফান্ড দরকার। এই অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলবে। প্রতিবছর অন্তত ৬০০ জন অ্যাসিড সারভাইভারস আমাদের ফোন করেন। অনেকে ফোন করে বলেন, ঘরে খাবার নেই। অর্থসংকটের কারণে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না।