দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিনা মূল্যে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেন দৃষ্টিহীন শাহিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র শাহিন আলম। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান শাহিন। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। অদম্য শক্তি ও সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন। নিজ যোগ্যতায় ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
করোনার সময়ে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন সময়ে কিছু করার চেষ্টা করেন শাহিন। সেই চেষ্টা থেকেই ফেসবুকে ঘোষণা দেন কম্পিউটার শেখাবেন। জুটে যায় প্রশিক্ষণার্থীও। এক বছরের মধ্যে তিনি ১১৩ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণও দিয়ে ফেলেছেন।
ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলো ট্রাস্টসহ সকলকে, যারা আমার মতো হার না মানা মানুষদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন
শাহিন আলমের বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। প্রশিক্ষণও দেন দেশ–বিদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। আর অনলাইন মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ দিতে তিনি কোনো পয়সাও নেন না। এই কার্যক্রম আরও একটু নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিতে শাহিনের দরকার ছিল একটি নিরবচ্ছিন্ন জুম আইডির সংযোগ। যেখানে তিনি একটানা প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। এই সংযোগ নেওয়াটা তার জন্য একটু কষ্টসাধ্য ছিল। তিনি আবেদন জানান প্রথম আলো ট্রাস্টের কাছে।
লেখক রাহিতুল ইসলাম তার 'কল সেন্টারের অপরাজিতা' বই থেকে প্রথম রয়্যালটির টাকার একাংশ থেকে শাহিন আলমকে এক বছরের জন্য জুম সংযোগ কিনে দেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট। শাহিন জানান, ‘খুব শীঘ্রই তিনি ষষ্ঠ ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলো ট্রাস্টসহ সকলকে, যারা আমার মতো হার না মানা মানুষদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।’
'কল সেন্টারের অপরাজিতা' বই থেকে প্রথম রয়্যালটির টাকার একাংশ থেকে শাহিন আলমকে এক বছরের জন্য জুম সংযোগ কিনে দেয় প্রথম আলো ট্রাস্ট।
শাহিন আলম যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, তখন হঠাৎ করে জ্বর আসে। ডাক্তার জানান টাইফয়েড। জ্বর ভালো হয়ে গেলেও চোখে কম দেখতে শুরু করেন শাহিন। মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। তখন শাহিন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। চোখে দেখতে না পেলেও একদিনের জন্যও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেনি তাঁর। তবে সাধারণ স্কুল ছাড়তে হয় তাঁকে। দুই বছর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। তারপর নড়াইলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতাধীন সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কার্যক্রমের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তোলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এলাকায় ফিরে শামছুল হুদা খান কলেজে ভর্তি হতে চাইলে কিছু শিক্ষক তাঁকে নিতে চাননি। পরে নিজের পড়ালেখার সব ব্যবস্থা নিজেই করার প্রতিশ্রুতি দিলে কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পান। ২০১৫ সালে এই কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। এখন পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার শিক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই অদম্য শক্তি টিকে থাক অনন্তকাল।