বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বৈশাখী নামের গ্রামটি আনেক দিন আগে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দারা অন্য গ্রামে বা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পরে যমুনায় সেই গ্রামের জায়গায় চর জেগে উঠলে কিছু বাসিন্দা ফিরে আসে। এখন বৈশাখীর চরে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসতি। এবারের দুই দফা বন্যা, নদীভাঙন আর করোনায় চরম সংকটে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা।
এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বৈশাখীর চরের ১০০টি বানভাসি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ ও আলু। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন কলেজশিক্ষক জাহিদুর রহমান, প্রথম আলো বন্ধুসভার বগুড়া সভার সাধারণ সম্পাদক এস কে কাব্য প্রমুখ।
ত্রাণ নিতে আসা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘কামকাজ তো নাই। খ্যাত বানের পানিতে ডুইবা নষ্ট হয়্যা গ্যাছে। ক্যামনে চলমু, খামু কী জানি না।’
চরের বাসিন্দারা জানালেন, বালুর চরে চাষাবাদ ও গরু-ছাগল পালন করে চলছিল তাঁদের সংসার। এ বছর দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় আবারও নদীর ভাঙন শুরু হয়। মানুষের বসতভিটা, ঘরবাড়ি, ফসলের খেতের ব্যাপক ক্ষতি করে চলে গেছে বন্যার পানি। বর্ষার সময় নদীর পানি বাড়লেই সবার আগে বিপদে পড়ে এই গ্রামের মানুষ। তবুও তারা চর ছাড়তে নারাজ। যুদ্ধ করেই চলছে তাদের জীবন।
৭৫ বছরের আবদুল হামিদ জানালেন, নদীভাঙনে এবার বসতবাড়িটাও হারিয়েছেন। ঘরে খাবার নেই। ১৫ দিন ধরে চিড়া-মুড়ি খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। চরের দুর্বিপাকে পড়ে স্ত্রী রওশন আরাকে মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে মাটির মায়ায় একাই রয়ে গেছেন এ চরে।
ত্রাণ নিতে এসেছিলেন দেলেরা খাতুন, হেনা খাতুন, রাবেয়া বেগমসহ কয়েকজন নারী। তাঁরা জানালেন, দীর্ঘ সময় উপার্জন না থাকায় এখন তাঁদের হাতে টাকা নেই, ঘরে কোনো খাবারও নেই। হাটবাজারগুলোও বন্ধ। আত্মীয়স্বজনের পাঠানো সাহায্যে বেঁচে থাকছেন তাঁরা।