সোহেল রানা স্নাতকে পড়েন। তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মাদক নিয়ে আলোচনা শুরু করবে ভাবছেন। মাদকের কুফল সম্পর্কে বোঝানো যায় কীভাবে, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
আজ মঙ্গলবার তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পেয়ে সোহেল রানা তাঁদের কাছে এ প্রশ্ন করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ধূমপান থেকে মাদকের শুরু। তাই ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে আচরণগত পরিবর্তন খেয়াল রাখতে হবে। এরপর প্রথমে সিগারেট ও পরে মাদকের কুফল সম্পর্কে আস্তে আস্তে বোঝাতে হবে।
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হলেন ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট মো. মোস্তফা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পঞ্চানন আচার্য ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এ এস এম রিদওয়ান। প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মাদকবিরোধী সভায় তাঁরা অতিথি হিসেবে ছিলেন। এই সভা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারী–পুরুষ এতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অতিথিদের কাছে মাদক ও বিভিন্ন আসক্তি সম্পর্কে জানতে চান।
পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
‘মাদক নিয়ে আলোচনা হোক’ শিরোনামে প্রথম আলো ট্রাস্ট এই সভার আয়োজন করে। মূলত ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। সূচনা বক্তব্য দেন বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব জিসান।
চিকিৎসক মো. মোস্তফা বলেন, এখানে মানসিক চিকিৎসার নামে যে রিহ্যাব সেন্টার গড়ে উঠেছে, সেগুলোর বেশির ভাগ নির্যাতন কেন্দ্র। মাদকাসক্তির চিকিৎসা অপ্রতুল। এখানে মাদকাসক্তি নিয়ে উচ্চমানের কাজ হয় না। মাদকাসক্তির পাশাপাশি আরও অনেক আসক্তি হয়, যেগুলো ক্ষতিকর। মাদকাসক্তি ছাড়াও আরও অনেক ধরনের মানসিক রোগ রয়েছে।
পঞ্চানন আচার্য বলেন, শুধু সিগারেট নয়, গাঁজা, অ্যালকোহল ইত্যাদি মাদকের ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব মাদক শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সিগারেট থেকে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। পরে তা থেকে ক্যানসারও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মাদক নিরাময়কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা থাকলে ভালো হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে এ এস এম রিদোয়ান বলেন, মনোযোগ নষ্ট হওয়ার কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। এখন শিক্ষার্থীরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করছে না। খেলাধুলাতেও অনেকের আগ্রহ নেই। এসব কারণে মনোযোগ কমে যায়। শিশু ও শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি কমাতে হবে।
এ এস এম রিদোয়ান আরও বলেন, মাদকের শুরু সিগারেট দিয়ে। হতাশা থেকে মাদক নেয়। এরপর মাদক খারাপ জেনেও সে আর দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারে না।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘সচেতনতার মাধ্যমে মাদকাসক্তি একদিন শূন্যের কোঠায় আসবে—এমন প্রত্যাশা আমাদের।’
বক্তারা বলেন, মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। মাদক থেকে বন্ধু–স্বজনকে বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে ব্যবহার কমে আসবে।