দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুনতাসিম জাওয়াদ। সে পড়ে চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে। মাদকের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সে আগে থেকেই টুকটাক জানত। অনেক দিন আগে সে শুনেছিল, মাদক নিলে বা ধূমপান করলে দুশ্চিন্তা কমে যায়। আজ সোমবার দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পেয়ে মুনতাসিম এ তথ্যের সত্যতা জানতে চাইল। সে প্রশ্ন রেখে বলল, রাস্তায় হাঁটতে-চলতে অনেকই ধূমপান করেন। কেউ কেউ বলেন, ধূমপানের ফলে দুশ্চিন্তা কমে যায়। এ কথা কি সত্য?
দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ধূমপান করে বা মাদক নিয়ে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা একটি ভুল পদ্ধতি। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য অন্য অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। ধূমপান করলে দুশ্চিন্তা কমে না। বরং নিকোটিন দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এ দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পঞ্চানন আচার্য ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এ এস এম রিদোয়ান। প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে মাদকবিরোধী সভায় আলোচক হয়ে আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁরা এসেছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। সেখানে কয়েক শ শিক্ষার্থীকে মাদকের ভয়াবহতা, মাদক থেকে দূরে থাকার উপায় নিয়ে তাঁরা কথা বলেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। সভায় বিশ্বজিৎ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেকেই নায়ক সাজার জন্য ধূমপান করে। আবার অনেকে পরীক্ষার ফল খারাপ হলে হতাশায় ধূমপান করে। এসব কোনোভাবেই করা যাবে না। ধূমপান করে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। ধূমপান হতাশা কমাতে পারে না। আবার নায়কও বানাতে পারে না। পরিশ্রম, পড়াশোনা আর সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তোমরা নায়ক হয়ে উঠবে।
‘আসুন মাদক বিষয়ে সচেতন হই’ শিরোনামে প্রথম আলো ট্রাস্ট এই সভার আয়োজন করে। মূলত ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব জিসানসহ একদল বন্ধু। সভায় বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুই চিকিৎসকের কাছে নানা প্রশ্ন করে। অনেকে প্রশ্ন করে প্রথম আলোর ম্যাগাজিন কিশোর আলো পুরস্কার হিসেবে পায়। এতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিল খুদে শিক্ষার্থীরা।
এই যেমন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সঞ্জয় রুদ্র। সে দুই চিকিৎসকের কাছে জানতে চেয়ে বলল, ‘আমার বন্ধু যদি আমার পাশে বসে ধূমপান করে এবং আমাকেও যদি ধূমপান করতে বলে, আমি কীভাবে তাকে না করব।’ তাঁর প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক এ এস এম রিদোয়ান বলেন, ‘না বলতেই হবে। প্রথমে আইনের বিষয়ে তোমার বন্ধুকে জানাতে হবে। উন্মুক্ত জায়গায় ধূমপান করলে জরিমানা দিতে হয়—এ কথাটি তাকে বলতে হবে। দ্বিতীয়ত তোমার বন্ধুকে বোঝাতে হবে। সে যদি না বোঝে, তোমাকে ওই স্থান কৌশলে ত্যাগ করতে হবে। অথবা অন্য বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে। কোনোভাবেই তার ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না।’
দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মো. নাইমুল হকের প্রশ্ন ছিল, সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে ধূমপান মৃত্যুর কারণ, ধূমপান করলে ক্যানসার হয়। কিন্তু দেখা যায়, অনেকে ছয় মাস সিগারেট খেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার অনেকে ছয় বছর সিগারেট খেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হননি। এটার কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এ এস এম রিদোয়ান বলেন, ক্যানসার নানা কারণে হতে পারে। মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। ধূমপান করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ঝুঁকি তৈরি করে। নিকোটিনের মাধ্যমে অনেক ধরনের ক্যানসার হতে পারে।
অবশ্য ধূমপান করলে ফুসফুসে ক্যানসার বেশি হয়। এ ছাড়া মুখে ক্যানসার হতে পারে। ফলে কারও ছয় মাস, কারও ছয় বছরে ক্যানসার হওয়ার বিষয়টি অনেক কিছুর ওপরই নির্ভর করে। তবে এ কথা পরিষ্কার যে ধূমপানের কারণে শরীরে নানা রোগ তৈরি হয়।
একই প্রশ্নের উত্তরে পঞ্চানন আচার্য বলেন, নিকোটিন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়; এটি সরাসরি কারণ নয়। এ ঝুঁকি কারও জন্য ২০ শতাংশ, আবার কারও জন্য ১০০ শতাংশ। শুধু সিগারেট নয়, গাঁজা, অ্যালকোহল ইত্যাদি মাদকের ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব মাদক শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আরেক শিক্ষার্থীর পক্ষ হয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা দুই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, কীভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে পারবে? এ বিষয়ে দুই চিকিৎসক বলেন, মনোযোগ নষ্ট হওয়ার কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। এখন শিক্ষার্থীরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করছে না। খেলাধুলাতেও অনেকের আগ্রহ নেই। এসব কারণে মনোযোগ কমে যায়।
তাই মনোযোগ বাড়াতে নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করতে হবে। নিয়মিত ঘুমাতে হবে। ব্যায়াম ও খেলাধুলায় সময় দিতে হবে। মোবাইল আসক্তি কমাতে হবে। তবেই পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে। পরীক্ষার ফল ভালো হবে।